জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার চেয়ে কম কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়া এবং বেকারত্ব ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসায় বর্তমানে দেশটির শ্রমবাজারে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। গত ৫০ বছর দেশটির বেকারত্ব আর কখনোই এতটা কম ছিল না। খবর রয়টার্সের।
গত শুক্রবার প্রকাশিত শ্রম বিভাগের কর্মসংস্থান প্রতিবেদনে চলতি বছরের মে ও জুনে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে কমানো হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করার কারণে শ্রমবাজারের চাহিদা কমেছে। জুনে একজন বেকারের বিপরীতে ১ দশমিক ৬টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার সংশোধনের একটি কারণ হতে পারে এই যে কোম্পানিগুলো নিয়োগ দেওয়ার মতো কর্মী পাচ্ছে না।
এই মিশ্র পরিস্থিতি সত্ত্বেও ফেডের বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের ধারণা পরিবর্তন হয়নি। তাঁরা মনে করছেন, ফেড নীতি সুদহার আবার বাড়ালেও অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে না, প্রবৃদ্ধির হার কমলেও। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করবে মূল্যস্ফীতির গতি-প্রকৃতির ওপর, যদিও জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে।
নিউইয়র্কের এফএইচএন ফিন্যান্সিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস লো বলেন, শ্রমবাজারে কর্মীর ঘাটতি এবং শ্রমচাহিদা কমে যাওয়ার কারণে দেশটির শ্রমবাজারের চাকরির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমবাজারকে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অর্থনীতিকে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ চাকরি তৈরি করতে হবে।
শ্রম বিভাগের এক জরিপে দেখা যায়, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অকৃষি খাতে চাকরি বেড়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার। জুনে হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার, যদিও প্রাথমিক প্রতিবেদনে ২ লাখ ৯ হাজার কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়। মে ও জুন মাসে সামগ্রিকভাবে ৪৯ হাজার কম কর্মসংস্থান তৈরি হয়, যদিও রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদেরা দুই লাখ কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। তিন মাসে ধরে কর্মসংস্থান বেড়েছে গড়ে প্রতি মাসে ২ লাখ ১৮ হাজার, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল গড়ে ৪ লাখ ৩৪ হাজার।
এখন সাপ্তাহিক গড় কর্মসময় ৩৪ দশমিক ৩ ঘণ্টায় নেমে এসেছে, যা কোভিড মহামারির পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। গত জুনে সাপ্তাহিক গড় কর্মসময় ছিল ৩৪ দশমিক ৪ ঘণ্টা। জুনের কর্মসময় বৃদ্ধির বিপরীতে বেসরকারি খাতে মোট কর্মসময় কমেছে। সাপ্তাহিক শ্রমসময় কমে যাওয়া এবং কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার অর্থ হলো, মহামারির সময়ের শ্রমঘাটতি এবং চলতি বছরের শুরুতে প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইয়ের ধারা সম্ভবত শেষ হয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি হারে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে। এ খাতে মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার। এ ছাড়া আর্থিক ও আবাসিক—উভয় খাতেই কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৯ হাজার করে।
ইনডিড হায়ারিং ল্যাবের অর্থনৈতিক গবেষণার প্রধান নিক বাংকার বলেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধি সত্ত্বেও মন্দা এড়িয়ে মন্থর প্রবৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছি, কিন্তু পথটি কঠিন হয়ে যাবে যদি ফেড সঠিক পদক্ষেপ না নেয়। অর্থাৎ মন্দা এড়াতে নীতি সুদহার অতিরিক্ত বাড়ানো যাবে না। ফেড সেটা না পারলে অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি মন্থর হয়ে যেতে পারে।
বেকারত্বের হার কমাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ সুখবর। দেশটির শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, গৃহস্থালিতে চাকরি বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার, যদিও শ্রমশক্তির চাহিদা বেড়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার। বেকারত্ব ৩ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে—৫০ বছর পর যা এ পর্যায়ে নামল। যদিও এটি ফেডের চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের অনুমান ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কম।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মজুরি এখন মূল্যস্ফীতির চেয়ে দ্রুতহারে বাড়ছে। এতে পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে এবং ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে। দেশটির ঘণ্টাপ্রতি গড় মজুরি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। মজুরি বৃদ্ধির হারও দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্থিতিশীল হয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে শ্রম ব্যয় কমেছে। এ বাস্তবতায় অর্থনীতিবিদেরা আশা করছেন, ফেড এ বছর নীতি সুদহার আর বাড়াবে না।