ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে ভারতকে আবার সতর্ক করলেন ট্রাম্প

মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে আবারও ভারতকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে যে বিরোধ রয়েছে, তা তাঁর সর্বশেষ বক্তব্যের মাধ্যমে সেটি আবার উঠে এসেছে। কিছুদিন আগেই ট্রাম্প ভারতকে শুল্কের একটি ‘বেশ বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জানিয়ে দিয়েছেন যে ভারত যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ অব্যাহত রাখে, তাহলে তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন। তিনি বলেন, ‘তারা যদি কর আরোপ করে, আমরাও একই পরিমাণ কর আরোপ করব। তারা কর আরোপ করুক, আমরাও করব এবং তারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর কর আরোপ করছে। কিন্তু আমরা এখনো কর আরোপ করিনি।’

ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের মূল ভাবনা হলো একধরনের সমতা রাখা। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যখন তিনি প্রথম দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তখন কৌশল ও নীতির কথা তিনি প্রচার করেছেন।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে বলে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। মার্কিন পণ্যে উঁচু হারে শুল্ক আরোপ করার কারণে এর আগেও ভারতের সমালোচনা হয়েছে। সর্বশেষ দেওয়া মন্তব্যে ট্রাম্প বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পারস্পরিক শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে কি আমরা কিছুই আরোপ করব না?’

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ বা শুল্কের রাজা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল আমদানিতে ভারত যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে, তা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। যদিও পরে ভারত শুল্ক কমিয়েছে, তারপরও ট্রাম্প সমালোচনামুখর রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভারত অনেক বেশি শুল্ক নেয়।’

ট্রাম্প ও ভারতের মধ্যে শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম দফায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক মাঝেমধ্যেই হোঁচট খেয়েছে। ২০১৯ সালে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্কের হার বাড়ানোর পর ভারত বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ট্রাম্প জিএসপির আওতায় ভারতকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য–সুবিধা প্রত্যাহার করেন।

দুই দেশের মধ্যে বড় পরিমাণে বাণিজ্য হয়। ২০২৩-২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের আমদানি ছিল ৪ হাজার ২২০ কোটি ডলার। বিপরীতে রপ্তানি ছিল ৭ হাজার ৭৫২ কোটি ডলারের পণ্য। যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। জিএসপি বাতিল হওয়ায় ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানি আরও বাধাগ্রস্ত হলে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও পোশাকের মতো ভারতীয় শিল্প সমস্যায় পড়বে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী হতে পারে

দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রশাসন যেসব নীতি বাস্তবায়িত করবে, তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থভিত্তিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভারতকে বাণিজ্য বাধা দূর করতে চাপ দেবে ওয়াশিংটন। বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্প যাকে মনোনীত করেছেন, সেই হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ‘আপনি আমাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করবেন, আমাদের কাছ থেকে আপনি ঠিক তেমন আচরণ আশা করতে পারেন।’

এই কৌশল ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে সুযোগও নিয়ে আসতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনা পণ্যের শুল্ক বাড়িয়ে দেয়, ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা সেই সুযোগ নিতে পারেন। এর আগে চীনের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে ভারত লাভবান হয়েছিল। চীনের পণ্যের বিকল্প হিসেবে মার্কিন কোম্পানিগুলো ভারত থেকে আমদানি বাড়িয়েছিল।

তবে ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছেন, তা ভারতকে বিপদে ফেলতে পারে। এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা কমবে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও পোশাক খাতের জন্য তা সমস্যা তৈরি করবে। কারণ, এই দুই শিল্প মার্কিন ক্রেতাদের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। একই সঙ্গে ভারতে মার্কিন বিনিয়োগ কমতে পারে, ফলে তা ভারতের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হবে।