যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিনেটের ব্যাংকিং কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর শেরড ব্রাউন এ আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, ‘চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পের অস্তিত্বের জন্য এখন একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ খবর বিবিসির
মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সিনেটর শেরড ব্রাউনের এ আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) রোধের সবচেয়ে জোরালো আহ্বান বলে মনে করা হচ্ছে। এত দিন চীনা বৈদ্যুতিক গাড়িকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে বিদায় করতে উচ্চ শুল্কহার আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস বলেছিল, চীনের তৈরি গাড়িগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
সিনেটর ব্রাউন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক ভিডিও পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা চীনকে তাদের সরকার-সমর্থিত প্রতারণা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পে আনতে দিতে পারি না।’
শেরড ব্রাউন হলেন গাড়ি উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে পরিচিত ওহাইওর একজন ডেমোক্র্যাট-দলীয় সিনেটর। তিনি আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে সিনেটর পদে নির্বাচন করে জয়ী হতে চাইছেন।
চীনা গাড়ি নিষিদ্ধকরণে শেরড ব্রাউন যে আহ্বান জানিয়েছেন, সে বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসকে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য বিবিসি অনুরোধ জানালেও কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘চীনের নীতি আমাদের বাজারকে তার যানবাহনে প্লাবিত করতে পারে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আমার নিজের চোখের সামনে এটি হতে দেব না।’
তখন হোয়াইট হাউস বলেছিল, চীনের তৈরি গাড়ির প্রযুক্তি ‘তাদের চালক ও যাত্রীদের ওপর প্রচুর পরিমাণে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করতে পারে’। এই উদ্বেগের জন্য চীনা গাড়ির ওপর ওয়াশিংটন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
হোয়াইট হাউস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে চীনা গাড়িগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে নিয়মিতভাবে তাদের ক্যামেরা ও সেন্সর ব্যবহার করে মার্কিন পরিকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য রেকর্ড করতে পারে।
চীন বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ এবং জাপানের সঙ্গে তারা এখন বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানিকারক হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে।
এ সপ্তাহে চীন সফরে যাওয়ার সময় মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বেইজিংকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে ওয়াশিংটন ২০০০ সালের দিককার মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘চায়না শক’ বা ‘চীনা আঘাতের’ পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না। তখন আমদানি করা চীনা পণ্যের বন্যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার যেন ভেসে যাচ্ছিল।
এদিকে জেনেট ইয়েলেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বিধিনিষেধ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন চীনের সহ-অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন। তিনি বলেন, চীনের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়ার কারণ হলো, তার ‘বড় মাপের বাজার, সম্পূর্ণ শিল্পব্যবস্থা ও মানবসম্পদের প্রাচুর্য।’
গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো বাইডেন প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন ফ্লাইট বা উড়ান কার্যক্রম অনুমোদন বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিগের কাছে লেখা চিঠিতে উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো বলেছে, চীনের ‘ক্ষতিকর প্রতিযোগিতাবিরোধী নীতি’ মার্কিন উড়োজাহাজ পরিবহন কোম্পানিগুলোকে অসুবিধার মধ্যে ফেলেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ৩৬০ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। এর জবাবে চীন ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশি মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে। জো বাইডেনের সরকার ট্রাম্পের আমলে জারি করা সেই শুল্ক নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য আমদানির পরিমাণ ২০ শতাংশ কমে ৪২৭ বিলিয়ন বা ৪২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। একইভাবে চীনে মার্কিন পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।