একের পর এক রেকর্ড গড়েই যাচ্ছে ভারতের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে দেশটির শেয়ারবাজারের মূল সূচক সেনসেক্সের মান ৮৩ হাজারের ঘরে ছিল। এরপর গত শুক্রবার, অর্থাৎ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের মান একলাফে ৮৪ হাজার পেরিয়ে যায়। এটা নতুন রেকর্ড।
সেই সঙ্গে ভারতের শেয়ারবাজারের আরেক সূচক নিফটিও নজির গড়ে যাচ্ছে। ভারতের বাজার–বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সে দেশের শেয়ারবাজার আরও কিছুদিন শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে—এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাজারের এই চাঙা ভাব সত্ত্বেও অনেকেই মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
শুক্রবার ভারতের শেয়ারবাজারের মূল সূচক সেনসেক্স ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৮৪ হাজার ৫৪৪ দশমিক ৩১ পয়েন্টে উঠেছে। নিফটি ৩৭৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ২৫ হাজার ৭৯০ দশমিক ১৫ পয়েন্ট উঠেছে।
ভারতের শেয়ারবাজারের এই উত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার হ্রাসের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। দীর্ঘ চার বছর পর গত সপ্তাহেই তারা নীতি সুদ কমিয়েছে, তা–ও আবার একধাপে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট। তার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এশিয়ার শেয়ারবাজারেও চাঙা ভাব এসেছে। ইউরোপ অবশ্য ব্যতিক্রম ছিল।
বাজার–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যেভাবে সুদ কমিয়েছে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীরা এতে উৎসাহ পেয়েছেন। তবে ভারতীয় বাজারের এই চাঙা ভাবের পেছনে আরও কিছু কারণ আছে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতির হার এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রবৃদ্ধির পালেও হাওয়া আছে—বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
তৃতীয়ত, ব্যাংকের সুদ আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বাজারে ভারতের বিনিয়োগ হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোও ভারতের বাজারের বিষয়ে ইতিবাচক। গত সপ্তাহের শেষ দুই দিনে তারা ১৬ হাজার ৬১১ দশমিক ৬১ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। কেবল শুক্রবার বিনিয়োগ করেছে ১৪ হাজার ৬৪ কোটি ৮ লাখ কোটি রুপি। এ ছাড়া মরগ্যান স্ট্যানলির কম্পোজিট সূচকে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। ফলে আগামী দিনে ভারতের বাজারে আরও পুঁজি বা বিনিয়োগ আসতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন চলতি বছর পাঁচ ট্রিলিয়ন বা পাঁচ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। হিন্দুস্তান টাইমসের ব্রোকারেজ সংস্থা সিএলএসএর আশা, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে; তখন শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। বড় ধরনের সংস্কার হলে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্য সেই অনুপাতে বা তার চেয়ে বেশি হারে বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, বাজারে মোট শেয়ারমূল্য যত বাড়বে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তত সুবিধা। এর মধ্য দিয়ে তাদের পক্ষে শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ সহজ হবে।
তবে বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা, এখন যেভাবে সূচকের উত্থান হচ্ছে, তা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সেটা হলো, কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম মৌলভিত্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে ধরে নিতে হবে বাজারে কৃত্রিমতা আছে।
ভারতের শেয়ারবাজারে নতুন অনেক আইপিও আসছে। এ বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। চলতি সপ্তাহেই নতুন ১০টি আইপিও আসছে বলে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৯৮-৯৯ সালে অনেক ডটকম কোম্পানি আইপিও ছেড়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এসব কোম্পানির অনেকগুলো উধাও হয়ে যায়। এখন যেভাবে আইপিও আসছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।