বিশ্ববাজারে চাল গম ভুট্টাসহ খাদ্যশস্যের দাম কমেছে

বিশ্ববাজারে দুই সপ্তাহে ভুট্টা ও চালের দাম ১%, গমের দাম ২% কমেছে। তবে চালের দামে এখনো বাড়তি প্রবণতা চলছে।

বিশ্ববাজারে চাল, গম, ভুট্টাসহ খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টা ও চালের দাম ১ শতাংশ, গমের দাম ২ শতাংশ কমেছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। পণ্যের দামের পাশাপাশি পরিবহন ভাড়া আর আমদানি খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাবে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে গত বছরের শেষ দিক থেকে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করে।

বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে এক বছর আগের তুলনায় ভুট্টার দাম ১৩ শতাংশ ও গমের দাম প্রায় ৩৪ শতাংশ কমেছে। তবে ভুট্টা ও গমের দাম কিছুটা কমলেও চালের দামে এখনো বাড়তি প্রবণতা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি রয়েছে চালের দাম। এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এখনো ভুট্টা ২২ শতাংশ ও গম ৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক কৃষি মূল্যসূচক ২ শতাংশ এবং খাদ্য ও রপ্তানি মূল্যসূচক ২ শতাংশ করে কমেছে।

বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও এখনো দেশে দেশে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এই সময়ে প্রায় সব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের দেশে, ৯৩ শতাংশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে এবং ৮৯ শতাংশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে বর্তমানে ৫ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে। এ ছাড়া অনেক দেশ দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির পথে রয়েছে।

এমনকি উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ এখন উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দামের বেঞ্চমার্ক সূচক গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত টানা ১১ মাস কমেছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর বিশ্বে সার উৎপাদন, পণ্যের দাম ও বাণিজ্য প্রবাহের ওপর এই যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, যুদ্ধের কারণে সার ও খাদ্যপণ্যের প্রধান প্রধান বাজার ও সরবরাহব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে খাদ্যপণ্যের উচ্চ দামই রয়ে গেছে।

যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ (বিএসজিআই) শীর্ষক একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তির ফলে যুদ্ধরত দুই দেশ থেকে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে। এতে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করে। চুক্তির পর থেকে চলতি বছরের ৫ মার্চ পর্যন্ত ২ কোটি ৩০ লাখ টনের বেশি শস্য রপ্তানি হয়েছে।

তবে বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের কারণ শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই নয়; অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম কমানোর লক্ষ্যে গত এক বছরে বিভিন্ন দেশ খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ কারণেও বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৩টি দেশ ২৯টি খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আর ১০টি দেশ ১৪টি পণ্যের রপ্তানি সীমিত করেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও এফএওর তথ্য অনুযায়ী গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ্বে ২০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় ৪৫টি দেশে জরুরি সহায়তার প্রয়োজন বলে জানায় সংস্থা দুটি।