যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা

কোভিডের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি সর্বোচ্চ, এক বছরে বেড়েছে ৮%

কোভিডের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ২০২৪ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ দশমিক ৮৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি ডলারে উঠেছে। সম্প্রতি মার্কিন অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরে ঘাটতি ৮ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বেড়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতি ছিল প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। এর আগে কোভিড-১৯ মহামারির সময় সহায়তা ও প্রণোদনার কারণে ২০২০ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৩ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল; ২০২১ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি ডলার।

মূলত ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ বাবদ মার্কিন সরকারের ব্যয় এই প্রথম ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতাধীন পেনশন কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এসব ব্যয় মেটাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতিও বাড়ছে।

২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়তে পারত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিক্ষাঋণ কর্মসূচি বাবদ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা বাতিল হওয়ায় ঘাটতি কিছুটা কমে যায়। তা না হলে বাজেট ঘাটতি দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেত।

২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ; পরের অর্থবছর তা বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে এই ঘাটতির প্রভাব পড়তে পারে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নিজেকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় আর্থিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যে নিজেকে যোগ্য দাবি করছেন, ক্রমবর্ধমান এই বাজেট ঘাটতি তাঁর জন্য সমস্যাজনক হতে পারে।

আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমিটি ফর আ রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেট পূর্বাভাস দিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা হ্যারিসের প্রস্তাবিত আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মার্কিন সরকারকে আগামী ১০ বছরে নতুন করে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিতে হতে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নতুন করে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিতে হতে পারে।

এদিকে ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় ৪ দশমিক ৯২ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১১ শতাংশ বেশি। ব্যক্তি ও করপোরেট কর আদায় বেড়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে মার্কিন সরকারের ব্যয় ১০ শতাংশ বা ৬১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেড়ে ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ঋণের সুদ ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধির এটাই ছিল প্রধান কারণ। ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণের সুদ বাবদ খরচ বেড়েছে। বাস্তবতা হলো মেডিকেয়ার স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চেয়েও এই ব্যয়ের পরিমাণ বেশি।

মার্কিন অর্থ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সুদ বাবদ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে; ১৯৯১ সালের রেকর্ড ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশের চেয়ে তা এখনো কম হলেও ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সে বছর ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ৭ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ৫ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ পাঁচ হাজার কোটি ডলার ও সামরিক ব্যয় ৬ শতাংশ বেড়ে ৮২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ঘাটতি ছিল ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যদিও মার্কিন সরকার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে। মূলত সেপ্টেম্বর মাসে কিছু ব্যয় বিলম্বিত হওয়ায় এই উদ্বৃত্ত তৈরি হয়, অন্যথায় ঘাটতি ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারত।

সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। মূলত ব্যয়ের সময়সীমা সমন্বয়ের কারণে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ কমেছে।