যুক্তরাজ্যে নভেম্বর মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবারও দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে।ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে নভেম্বর মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবারও দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে।ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে

যুক্তরাজ্যের মানুষের দুর্দশার যেন শেষ নেই। ব্রেক্সিট থেকে শুরু হয়েছে দেশটিতে অস্থিরতা, তারপর এল কোভিড আর এখন চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। কোভিডের সময় ২০২০ সালের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংকুচিত হয়েছিল যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। আবার এখন যখন জ্বালানির উচ্চ মূল্যে সব দেশ দিশাহারা, তখনো সবচেয়ে ভুক্তভোগী এই যুক্তরাজ্য।

বাস্তবতা হলো, নভেম্বর মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবারও দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে। ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে আবার তাজা খাবারের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের মাস অক্টোবরে ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

এখানেই শেষ নয়, কারণ সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্ত এখনো দেখা যাচ্ছে না। দেশটির বৃহৎ খুচরা বিক্রেতাদের জোট ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের পূর্বাভাস, মূল্যবৃদ্ধির ধারা আগামী বছর ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে।

দ্য টেলিগ্রাফের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যজুড়ে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে সামগ্রিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাষিরা মুরগি পালন কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশটিতে চলছে এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এভিয়ান ফ্লুর সংক্রমণ—এই জোড়া ধাক্কায় দেশটিতে মুরগি পালন অনেকটাই কমে গেছে। ডিম সরবরাহ অনেকটা কমে যাওয়ায় বেশ কিছু সুপারমার্কেট ডিম রেশন করে বিক্রি করছে। গত পনেরো দিনে দেশটিতে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন বলেছেন, দিনে দিনে এ ধারণা আরও জোরালো হচ্ছে যে এবারের শীতকাল আরও কঠিন হয়ে উঠবে। তিনি মনে করেন, ২০২৩ সালের একসময় মূল্যস্ফীতির হার হয়তো কমতে শুরু করবে, কিন্তু এবারের বড়দিন ভালো যাবে না। কারণ, মানুষের পক্ষে এখন উৎসবের কেনাকাটা করা সম্ভব না, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই যেখানে মানুষ দিশাহারা, সেখানে উৎসবকেন্দ্রিক কেনাকাটা তো বিলাসী ব্যাপার।

এদিকে এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাসও কমে যাচ্ছে। পৃথক আরেক জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের লকডাউনের পর দেশটির ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস এখন সবচেয়ে কম। লয়েডস ব্যাংকের বিজনেস ব্যারোমিটার অনুসারে, নভেম্বর মাসে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস ৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ। অথচ দেশটির ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি আত্মবিশ্বাসের গড় হার হচ্ছে ২৮ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ছয় মাস অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদের গ্রাফ নিম্নমুখী।

স্বাভাবিকভাবেই এই বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর কর্মী নিয়োগের প্রবণতা কমে যাচ্ছে, এ মুহূর্তে যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, অর্থাৎ কোভিড সংক্রমণের সময়ও পরিস্থিতি এতটা নাজুক ছিল না। অনেক কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করবে। ইউগভের পৃথক আরেক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি কর্মী ছাঁটাই করবে। অন্যদিকে প্রযুক্তি খাতে বিপুল ছাঁটাই চলছে।

এদিকে অক্টোবর মাসে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ—১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) তথ্যানুসারে, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ আর বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।