জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের শুরুতে দেশটির অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে চলতি মাসে ফেডের নীতি সুদহার হ্রাসের ক্ষেত্রে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, এখন তার পাল্টা যুক্তি তৈরি হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচক বা পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার (পিসিই) বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। জুন মাসে এই সূচক বেড়েছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। জুলাই মাসে পণ্যের দাম ছিল অপরিবর্তিত। গত মাসে এ নিয়ে সেবার মূল্য বেড়েছে টানা তিন মাস। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত পিসিই সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার রেকর্ড ৪ দশমিক ৩ শতাংশে উঠে যাওয়ায় মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে বিনিয়োগকারীরা নীতি সুদহার কমানোর দাবি তোলেন। এমনকি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলও বলেছিলেন, সেপ্টেম্বর মাসে নীতি সুদহার কমানো হবে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভকে নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে চাপ দেওয়ার অর্থ হয় না। ভোক্তা ব্যয়ের যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মন্দার আশঙ্কা নেই।
মার্কিন জিডিপির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসে ভোক্তা ব্যয় থেকে। পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে সে দেশের ভোক্তা ব্যয় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, জুন মাসে যা বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদেরাও আশা করছিলেন, জুলাই মাসে ভোক্তা ব্যয় বাড়বে।
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়ের পর দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির ভোক্তা ব্যয় যেভাবে বেড়েছিল, তৃতীয় প্রান্তিকের শুরুতে সেই ধারা অব্যাহত আছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বার্ষিক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ শতাংশ।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। ফেডারেল রিজার্ভ আটলান্টার পূর্বাভাস, তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৫ শতাংশে উঠবে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবা উভয় খাতেই ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন গ্রীষ্মকাল। চলছে ভ্রমণের মৌসুম। ফলে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ কেনাবেচা বেড়েছে। মূলত এ দুটি পণ্যের বাড়তি বিক্রি ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে আবাসন ও পরিষেবা খাতেও ব্যয় বেড়েছে; খাদ্য, পানীয়, বিনোদন, বিমা ও আর্থিক সেবা খাতে মানুষ বেশি ব্যয় করেছে। বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়; সেই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের রেস্তোরাঁ ও বারে যাওয়া।
কর্মসংস্থানের হার কমে গেলেও মজুরি বৃদ্ধিতে ভালো গতি দেখা গেছে। সে কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে।
জুলাই মাসে মানুষের ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; জুন মাসে যা ছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। জুলাই মাসে মজুরি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; আগের মাস জুনে যা বেড়েছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
পিসিই ঠিক ভোক্তা মূল্যসূচক বা সিপিআই নয়। এই সূচকে ভোক্তাদের কেনা পণ্যের দামের পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। সিপিআই সূচকেও বিভিন্ন পণ্যের ব্যয় পরিমাপ করা হয়; কিন্তু পিসিই সূচকের পরিসংখ্যান ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালিসিসের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়। এর অর্থ হলো, পিসিই দিয়ে মার্কিন অর্থনীতির পুরো চিত্র বোঝা যায়। স্থায়ী ও অস্থায়ী পণ্য ও সেবায় কত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, পিসিই সূচকে তা পরিমাপ করা হয়।
পিসিই সূচক দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ গতিবিধি পরিমাপ করেন। এখানেই পিসিই সূচকের গুরুত্ব। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান চলতি মাসে নীতি সুদ কমানোর কথা বলেছিলেন। পিসিই সূচক প্রকাশের পর তারা কী অবস্থান নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।