উড়োজাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ বিপদেই পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাণকারী কোম্পানি বোয়িং। সম্প্রতি একাধিক দুর্ঘটনার পর ইউরোপের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বুধবার বলেছে, তারা বোয়িংকে পরোক্ষভাবে জেট উৎপাদনের যে অনুমোদন দিয়েছিল, প্রয়োজন হলে তা প্রত্যাহার করা হবে। যদিও তাদের বিশ্বাস, বোয়িং নিরাপত্তাজনিত সমস্যা যথাযথভাবে মোকাবিলা করছে।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান চলাচলবিষয়ক নিরাপত্তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক লুস টিটগাটের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে বৈশ্বিক বিমান উৎপাদনের পেছনে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছিল, চলমান সংকটে তা একরকম পরীক্ষার মুখে পড়েছে। এমন ঘটনা বেশ বিরল।
এমনকি তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত বিমানের নিরাপত্তা অনুমোদন অগ্রাহ্য করতে পারে কি না, তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রয়োজন হলে তা করা হবে।’
চলতি বছরের শুরু থেকে একের পর এক খারাপ সংবাদ পাচ্ছে বোয়িং। বলা যায়, খারাপ এই চক্রের সূত্রপাত আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ডোর প্লাগে যে নাট-বল্টু লাগানোর কথা ছিল, সেগুলো ঠিকমতো লাগানো ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) প্রাথমিক তদন্তে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা বলেছে, বোয়িং ও তাদের সরবরাহকারী স্পিরিট অ্যারো সিস্টেমসের নিরীক্ষায় মান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় দুর্বলতার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিদ্যমান চুক্তি অনুসারে, এফএএ এবং ইউরোপের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বোয়িং ও এয়ারবাসের কারখানায় উৎপাদনের মান নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরস্পরের নিরাপত্তাজনিত প্রত্যয়ন অনুমোদন করে।
এমন যদি হয় যে এক পক্ষ আরেক পক্ষের অনুমোদনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস হারায় বা তাদের মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে তারা আলোচনার আহ্বান জানাতে পারে। সেই আলোচনা ব্যর্থ হলে এই পারস্পরিক স্বীকৃতি ৩০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হতে পারে। তবে এ ধরনের ঘটনা বিরল।
লুস টিটগাট বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ামাত্র স্বীকৃতি বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি এ–ও বলেন, সে ধরনের কোনো কিছু আসন্ন নয়।
বোয়িংয়ের ম্যাক্স মডেলের বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর তাদের বিমানের নকশা প্রণয়নে ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রভাব বেড়েছে। কিন্তু বোয়িংয়ের ম্যাক্স বিমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তদারকি বৃদ্ধির সুযোগ তাদের কম; বরং তার চেয়ে সহজ হলো স্বীকৃতি স্থগিত করে দেওয়া।
সে রকম কঠোর সিদ্ধান্ত ইউরোপ নেবে কি না, এ বিষয়ে লুস টিটগাটের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জবাব দেন, ভবিষ্যতে বোয়িংয়ের বিমান বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হলে তা করা হতে পারে।
সম্প্রতি বোয়িং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর টিটগাট বলেন, বোয়িং মান নিয়ন্ত্রণ ও বিমানের মানোন্নয়নে জোর দিচ্ছে বলে তাঁর মনে হয়েছে, অর্থাৎ বোয়িংয়ের পরিচালনায় একধরনের পরিবর্তন আসছে। তিনি এ বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছেন। ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্প্রতি বোয়িংয়ের কারখানা পরিদর্শন করলেও সেখানে তাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান চলাচলবিষয়ক নিরাপত্তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি টান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা চুক্তির বড় ধরনের লঙ্ঘন।
এদিকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রশাসক মাইক হুইটেকার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বোয়িংয়ের উৎপাদন বন্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যে পরিস্থিতি এখন সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ যদি পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা হিসেবে বোয়িং ও এয়ারবাসের নিরাপত্তা মানদণ্ড বৃদ্ধি করে, তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এর অর্থ হলো রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হতে পারে।