গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের মহাদেব অনলাইন বুক অ্যাপের মালিক সৌরভ চন্দ্রকরের বিয়েতে ২০০ কোটি রুপি ব্যয় হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কারণ, এই বিয়ের পুরো অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল নগদে। এ ঘটনার সূত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বলিউড অভিনেতা রণবীর কাপুরকেও ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।
রণবীর কাপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই অ্যাপের প্রোমোটারদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে অনলাইনে তাঁদের প্রচারণা করেন। তবে শুধু রণবীর কাপুর নন, এ ঘটনায় আরও ১৪-১৫ জন সেলিব্রিটি ইডির নজরদারিতে আছে, যাঁদের শিগগিরই ডেকে পাঠানো হতে পারে।
সৌরভ চন্দ্রকর হলেন এই অ্যাপের প্রোমোটারদের একজন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ্য রাস আল-খাইমাহতে তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
বিয়ের ডেকোরেটর, বিয়েতে নাচের জন্য শিল্পীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মুম্বাই থেকে। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের ব্যক্তিগত বিমানে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ চন্দ্রকর। অভিযোগ হলো, বিয়ের খরচের টাকা নগদে মেটানো হয়েছিল দফায় দফায়, বিশেষ করে হাওলার মাধ্যমে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মহাদেব অনলাইন বুক জুয়ার অ্যাপের সঙ্গে সর্ম্পকিত মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে ইডি।
বিবৃতিতে ইডি বলেছে, এই ব্যক্তিরা হঠাৎ প্রাপ্ত অবৈধ অর্থের প্রদর্শন করেছেন। এই কারচুপির নেপথ্যে রয়েছেন সৌরভ চন্দ্রকর ও রবি উপ্পল, যাঁরা এই মহাদেব বুক অ্যাপের মূল কারিগর। তাঁরা দুবাই থেকে এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাঁদের এই মহাদেব অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা যায়, যা অবৈধ। এ ঘটনার সূত্রে ইডি ভারতের রায়পুর, ভোপলা, মুম্বাই ও কলকাতার ৩৯টি স্থানে তল্লাশি চালায়। এসব অভিযানে তারা ৪১৭ কোটি রুপির অবৈধ সম্পদ জব্দ করে।
বিজনেস টুডের সংবাদে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি দুবাই থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইডির তদন্তে জানা গেছে, এই অনলাইন জুয়ার অ্যাপের মাধ্যমে নতুন ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মে এনে তাঁদের জন্য একটি পরিচয় তৈরি করা হয়। এরপর একাধিক স্তরের বেনামী ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়। এই অ্যাপ ‘প্যানেল/ব্র্যাঞ্চের মাধ্যমে’ পরিচালিত হয় এবং লাভের বখরা তাদের মধ্যে ৭০-৩০ শতাংশ ভিত্তিতে ভাগ হয়।
বিভিন্ন সংবাদে বলা হয়, ভারতে বেটিংয়ের জন্য চার হাজার প্যানেল অপারেটর নিয়োগ দিয়েছিলেন সৌরভ ও রবি। প্রতিটি প্যানেলে থাকেন ২০০ জন গ্রাহক। তাঁরা বাজি লড়েন।
অ্যাপটি কাজ করে চার থেকে পাঁচটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে। ইডির একটি সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, এই অ্যাপের খেলার নিয়ম এতটাই গোলমেলে যে এতে বিনিয়োগ করলে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তাই প্রায় পুরোটাই যায় এই জালিয়াতদের পকেটে। এরপর সেই অর্থ হাওলার মাধ্যমে অফশোর হিসেবে পাঠানো হয়। এ ছাড়া এর প্রচার-প্রচারণা বাবদ ভারতেও বড় অঙ্কের অর্থ নগদে ব্যয় করা হয়।