হিনডেনবার্গ রিসার্চ কোনো কোম্পানিকে লক্ষ্যবস্তু বানালে সেই কোম্পানির শেয়ারদর কমে, যার সাম্প্রতিক নিদর্শন হচ্ছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। এবার শর্টসেলার হিনডেনবার্গ নিশানা করেছে আইকান এন্টারপ্রাইজেস এলপি (আইইপি) নামের এক কোম্পানিকে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হিনডেনবার্গের অভিযোগ যে আইইপি নিজেদের হোল্ডিংয়ের অতিমূল্যায়ন করেছে এবং লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে পনজি (একধরনের কূটকৌশল, যেখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ পুরোনো বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়) স্কিম ব্যবহার করছে।
হিনডেনবার্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইইপির শেয়ারদর ২০ শতাংশ আর কোম্পানির কর্ণধার কার্ল আইকানের সম্পদমূল্য ২৯০ কোটি ডলার কমেছে। ফলে ফোর্বসের তথ্যানুসারে, আইকানের সম্পদমূল্য এখন ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
বিষয়টি কার্ল আইকানের জন্য বিরল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তিনি মূলত অ্যাকটিভিস্ট শেয়ারহোল্ডার হিসেবে পরিচিত; এত দিন বিভিন্ন কোম্পানির সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন, নিজে এমন সমালোচনার মুখে পড়েননি।
কার্ল আইকান এক বিবৃতিতে বলেছেন, হিনডেনবার্গ নিজের স্বার্থে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। আইইপির দীর্ঘদিনের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিগ্রস্ত করে তারা নিজেদের আখের গোছাতে চাইছে।
কার্ল আইকান আরও বলেন, ‘আমরা জনসমক্ষে যে তথ্য প্রকাশ করি, সেটাই প্রকৃত তথ্য। দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির কার্যক্রমই বলে দেবে, আমরা কেমন, অতীতেও সব সময় তা হয়েছে।’
সানি আইল বিচ, ফ্লোরিডাভিত্তিক এই কোম্পানি জ্বালানি, অটোমোটিভ খাদ্য প্যাকেটজাতকরণ, আবাসন ও অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ আছে। আইইপির ৮৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করেন কার্ল আইকান।
হিনডেনবার্গ বলছে, আইইপির বিভিন্ন ইউনিটকে ৭৫ শতাংশের বেশি অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির শেয়ার তার সর্বশেষ ঘোষিত নিট শেয়ার মূল্যের ২১৮ শতাংশ প্রিমিয়ামে লেনদেন হয়েছে, যা তার সমপর্যায়ের কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশি।
হিনডেনবার্গের আরও অভিযোগ, বাজারে আইইপির শেয়ারমূল্য নিয়ে বুদ্বুদ তৈরি করা হয়েছে। তারা যে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বাজার মূলধনসম্পন্ন যেকোনো কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে আইকান বেশি লভ্যাংশ দিতে নিজের লভ্যাংশ স্টকে নিয়েছেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে আইইপি নতুন স্টক বিক্রি করেছে।
হিনডেনবার্গের অভিযোগ, ‘আইকান নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে পুরোনো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছেন’, অর্থাৎ পঞ্জি স্কিমের দ্বারস্থ হয়েছেন কার্ল আইকান।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের কাজই হচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানির দুর্বলতা খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা। এ কাজের উদ্দেশ্য হলো, তাদের শেয়ারমূল্য কমিয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে লাভ করা। সর্বশেষ তাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল ভারতের আদানি গোষ্ঠী। তাদের বিরুদ্ধে স্টক জালিয়াতির অভিযোগ তোলে হিনডেনবার্গ। সেই ধাক্কায় আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়।
এরপর হিনডেনবার্গের কারণে একই হাল হয় টুইটারের সাবেক সিইও জ্যাক ডরসির মালিকানাধীন সংস্থা ‘ব্লক’-এর।
‘ব্লক’ একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি। তাদের বিরুদ্ধে হিনডেনবার্গের অভিযোগ, ‘ব্লক’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি করে দেখিয়েছে এবং নিজেদের সম্পর্কে বাড়িয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর ‘ব্লক’-এর শেয়ারের দর আদানিদের শেয়ারের দরের মতোই পড়তে শুরু করে; কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের মোট সম্পদমূল্য প্রায় ১১ শতাংশ কমে যায়।
হিনডেনবার্গের ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১৬টি কোম্পানির সম্ভাব্য অনিয়ম তারা উদ্ঘাটন করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল টুইটার। যেসব কোম্পানিকে তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়, তাদের ক্ষেত্রে হিনডেনবার্গ কখনো ‘শর্ট’ আবার কখনো ‘লং’ অবস্থান নেয়। এতে শেয়ারের দাম ওঠানামা করে আর তার লাভের অর্থ ঘরে তোলে হিনডেনবার্গ।