গৌতম আদানি
গৌতম আদানি

এবার আদানির সঙ্গে চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা

আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত বাম সরকার। দেশটির সাবেক সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বায়ু বিদ্যুৎসংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছিল, সে বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবগঠিত মন্ত্রিসভা। সিলোন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের মুখপাত্র ধনুষ্কা পরাক্রমসিঙ্ঘে এ কথা জানিয়েছেন।

ধনুষ্কা পরাক্রমসিঙ্ঘে বলেন, আদানি গোষ্ঠীর ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয়, তার পরিবেশগত প্রভাব—এসব কিছু খতিয়ে দেখা হবে। প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কার মান্নার ও পুনেরিনে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। চুক্তি বাতিল না হলেও আপাতত এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমার দিশানায়েকে।

ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি বন্দরকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি)। রোববার তারা জানিয়েছে, ঋণ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। গত নভেম্বরেই সংস্থাটি বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণে ৫৫ কোটি ডলার অর্থসাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডিএফসি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থ সাহায্য করে থাকে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ ও ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে আদানিকে। এমনকি গৌতম আদানিসহ শীর্ষ নির্বাহীদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অভিযোগ, বাজার থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি পেতে অন্ধ্রপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের মোট ২ হাজার ২৩৭ কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছিল আদানিরা।

আদানি গ্রিন এনার্জি আমেরিকার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে সেখানকার আইন মেনে চলতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে তারা ঘুষের টাকা আমেরিকার বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা বেআইনি। ফলে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ধারণা করা হচ্ছে, ‘ঘুষকাণ্ডে’ নাম জড়ানোর পরেই আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্পের বিষয়ে নড়েচড়ে বসছে বিভিন্ন দেশের সরকার। পর্যালোচনা করা হচ্ছে এসব চুক্তি।

শেখ হাসিনার আমলে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হওয়া একটি বাণিজ্যচুক্তি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও।

এ ছাড়া আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি বাতিল করেছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো গত বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে দুটি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন।

একটি চুক্তির অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই চুক্তির আওতায় দেশটির জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ করার কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। এ ছাড়া ৩০ বছর মেয়াদি ইজারার (লিজ) আওতায় বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল উন্নত করার কথা ছিল।

সম্পদমূল্য কমছে

এদিকে ঘুষকাণ্ড প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমছেই। সোমবার আদানির সম্পদমূল্য কমেছে ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের। এই প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁর সম্পদমূল্য ছিল ৫৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার। সেই সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির অবস্থান ছিল ২৭তম।

ঘুষকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার এক দিনে গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমে যায় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। তবে পরে শেয়ারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্পদমূল্য হ্রাসের পরিমাণ কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারে নেমে আসে।

বৃহস্পতিবার ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির অবস্থান ছিল ২৫তম। তাঁর মোট সম্পদমূল্য ছিল ৫৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। ঘুষকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা

এদিকে আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সমন জারির পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। মামলার আরজিতে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগে প্রমাণিত হয়, আদানি গোষ্ঠীর পরিচালনায় ঘাটতি আছে। তারা আইন ভঙ্গ করে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে শীর্ষ আদালতকে আরজি জানিয়েছেন মামলাকারী আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি।