ফেডারেল রিজার্ভ
ফেডারেল রিজার্ভ

ফেডারেল রিজার্ভের বার্তা, সেপ্টেম্বরেই কমতে পারে মার্কিন সুদহার

অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল নীতি সুদ কমানোর সময়সীমা সম্পর্কে বার্তা দিয়েছে। ফেড বলেছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে নীতি সুদহার কমানো শুরু হতে পারে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ফেডের জুলাই মাসের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক শেষ হয়েছে। সেই বৈঠকে আবারও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদ এখনো ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গতকাল মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক শেষে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের বৈঠকের এজেন্ডায় সুদ কমানোর বিষয়টি থাকতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, চলতি সপ্তাহে হয়ে যাওয়া ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির বৈঠকেও সুদহার কমানোর বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক আলোচনা হয়েছে।

সেন্ট্রাল ওপেন মার্কেট কমিটি মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের দিকে নেমে আসছে। তা সত্ত্বেও কর্মকর্তারা বলেছেন, সুদহার কমানোর আগে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তাতে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে; এরপর পরিসংখ্যানের আরও উন্নতি হলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও জোরদার হবে।’ তাঁর এ কথায় এটা স্পষ্ট, ফেডারেল রিজার্ভ টানা দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে নীতি অবলম্বন করেছে, এবার তার দিক ঘোরানোর সময় এসেছে।’

জে পি মরগ্যান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বব মিশেল বলেছেন, পাওয়েল যত রকম ইঙ্গিত দেওয়া যায়, তার সবই দিচ্ছেন, অর্থাৎ এখন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যদি এমন কিছু না ঘটে, তাহলে সেপ্টেম্বর মাসে নীতি সুদ অন্তত শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমানো হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়েছে। এ বিষয়ে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি গতকাল বলেছে, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব—ফেডারেল রিজার্ভ উভয় দায়িত্বই সামলাচ্ছে। তারা নিশ্চিত করেই বলেছে, মূল্যস্ফীতি এখন আর সবচেয়ে বড় বিষয় নয়, বরং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এখন নীতিপ্রণেতাদের কাছে সবার আগে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির একমাত্র উপায় হলো বিনিয়োগ বাড়ানো; বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নীতি সুদ কমাতে হয়। সুদহার কমলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন।

জেরোম পাওয়েল বলেন, মূল্যস্ফীতি যে ফেডারেল রিজার্ভের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা বোঝার জন্য বেকারত্বের হার আর বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। বিনিয়োগ–বিশেষজ্ঞ গার্গী চৌধুরী বলেছেন, গতকাল ফেডের সংবাদ সম্মেলনে শ্রমবাজারের ঝুঁকি নিয়ে পাওয়েল যত কথা বলেছেন, সম্প্রতি আর কোনো সংবাদ সম্মেলনে ফেড এ বিষয়ে এত কথা বলেনি।

এদিকে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পাওয়েলকে সতর্ক করেছেন, নভেম্বর মাসের নির্বাচনের আগে যেন নীতি সুদ কমানো না হয়। তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচিত হওয়ার পর যদি তিনি দেখেন ফেডের চেয়ারম্যান যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা ঠিক কাজটি করছেন, তাহলে তিনি তাঁকে মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ দেবেন।

জবাবে জেরোম পাওয়েল গতকাল বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার হাতিয়ার দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে যেমন সহায়তা করে না, তেমনি তার বিরোধিতাও করে না বা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি প্রণীত হয় না।

সম্ভাব্য নীতি সুদ হ্রাসের প্রভাব ইতিমধ্যে বন্ডের বাজারে পড়েছে। পাওয়েলের এ ঘোষণার পর দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদ শূন্য দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ নেমে এসেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর যা সর্বনিম্ন। তবে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার বাজারে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশায় সঙ্গে যা ওঠানামা করে। এই ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে; শূন্য দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে নেমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদের ওপর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের সুদও বাড়ে। ফলে বিনিয়োগকারীরা টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাঁরা ভাবেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, ভালো সুদ পাওয়া যাবে। বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে বিশ্বজুড়ে হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হয়।