বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত শুক্রবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অজয় বাঙ্গা। বিশ্বব্যাংকের ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তখনই বিষয়টি একরকম নিশ্চিত ছিল যে তিনিই হতে যাচ্ছেন এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী প্রধান। এরপর গত ৩ মে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদ অজয় বাঙ্গাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করে।
বিশ্বব্যাংকের দাপ্তরিক টুইট থেকে বলা হয়েছে, ‘আসুন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমরা অজয় বাঙ্গাকে স্বাগত জানাই। এই বাসযোগ্য ধরিত্রীতে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
অন্যদিকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘অজয় বাঙ্গা দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, আমি তাঁকে শুভকামনা জানাই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করি। বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সহায়তায় আমরা একত্রে কাজ করব।’
অজয় বাঙ্গা ডেভিড ম্যালপাসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি প্রতিষ্ঠান জেনারেল আটলান্টিকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। মাস্টারকার্ডের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে অজয় বাঙ্গা ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আসুন, অজয় বাঙ্গা সম্পর্কে জেনে নিই ১০ তথ্য।
১. ভারতের পুনেতে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন অজয় বাঙ্গা। তাঁর বাবা হরভজন সিং বাঙ্গা ও মা যশবন্ত বাঙ্গা। হরভজন সিং ভারতীয় আর্মির জেনারেল ছিলেন। অজয় বাঙ্গার সহধর্মিণী রিতু বাঙ্গা।
২. দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন অজয় বাঙ্গা। তারপর আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন তিনি।
৩. পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮১ সালে নেসলে ইন্ডিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন অজয় বাঙ্গা। পরে ভারত ও মালয়েশিয়ায় সিটি ব্যাংকে কাজ করেন।
৪. ১৯৯৬ সালে অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যোগ দেন পেপসিকোতে। সেখানে তিনি ১৩ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদেও ছিলেন অজয় বাঙ্গা।
৫. ২০০৯ সালে মাস্টারকার্ডের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বা সিওও হিসেবে দায়িত্ব নেন অজয় বাঙ্গা। পরে তিনি মাস্টারকার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হন। তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বে ব্যবসার সম্প্রসারণ হয় মাস্টারকার্ডের। লেনদেনের নতুন প্রযুক্তি ও সেবার বিষয়েও জোর দেন তিনি।
৬. বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে করতে অজয় বাঙ্গা তথ্যপ্রযুক্তি, ডেটা, আর্থিক সেবা ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রে একজন নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ২০২০-২২ মেয়াদে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অনারারি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
৭. অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে পার্টনারশিপ ফর সেন্ট্রাল আমেরিকায় কাজ করেছেন। এই অলাভজনক সংস্থাটি উত্তর-মধ্য আমেরিকায় বিনিয়োগের পরিবেশ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে।
৮.আমেরিকান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনেরও ইমেরিটাস চেয়ারম্যান অজয় বাঙ্গা। এ ছাড়া তিনি ন্যাশনাল কমিটি অন ইউএস-চায়না রিলেশনসের সাবেক সদস্য।
৯. অজয় বাঙ্গা সাইবার রেডিয়েন্স ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কমিশন অব এনহ্যান্সিং ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেন।
১০. ২০১৬ সালে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন অজয় বাঙ্গা। তার আগে ২০১২ সালে ফরেন পলিসি অ্যাসোসিয়েশন মেডেল পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৯ সালে দ্য বিজনেস কাউন্সিল ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিংস গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২ সালে সিঙ্গাপুর সরকারের ডিস্টিংগুইশড ফ্রেন্ডস অব সিঙ্গাপুর পাবলিক সার্ভিস স্টার পুরস্কার পেয়েছেন অজয় বাঙ্গা।