যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, নীতি সুদ কমানোর সময় এসেছে। তবে কবে নাগাদ তা কমানো হবে এবং কী হারে কমানো হবে, সে বিষয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলেননি।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হোলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল এ কথা বলেন। বিবিসি জানায়, এত দিন সুদহার কমানোর বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও এবারই প্রথম জেরোম পাওয়েল পরিষ্কারভাবে বললেন, নীতি সুদহার কমানোর সময় এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্লেষকেরা ভাবছিলেন, ফেড হয়তো এবার উচ্চ নীতি সুদহারের জমানা থেকে বেরিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হারও জুলাই মাসে কমেছে। ফলে সার্বিকভাবে ধারণা ছিল, ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো এবার নীতি সুদহার কমাবে। বাজারের সেই প্রত্যাশা মিটিয়ে ফেড চেয়ারম্যান এবার সেই ঘোষণা দিলেন।
সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল বলেন, মহামারির সময় থেকে যে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে, সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র পেরিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস ক্রমেই বাড়ছে। জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসার কারণেও এই আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। যদিও পাওয়েল বলেছেন, কবে ও কী হারে এই নীতি সুদহার কমানো হবে, তা নির্ভর করবে তথ্য-উপাত্তের ওপর।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি মনে করেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে চলমান লড়াইয়ে বিজয়ী হতে এখনো অনেক সময় সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, ‘কাজ শেষ হয়নি; সে জন্য আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। এখনো টেকসইভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।’
ফেডারেল রিজার্ভ গত বছরের জুলাই মাসের পর নীতি সুদহার বাড়ায়নি। এত দিন ধরে তা অপরিবর্তিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ, এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমিয়েছে।
ফেড দুই বছর ধরে নীতি সুদহার বাড়ালেও সেখানে বিশেষ সমস্যা হয়নি। মূলত মহামারির সময় মার্কিন সরকার জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দেওয়ায় এই সময় বেকারত্ব ততটা মাথাচাড়া দেয়নি, যদিও নীতি সুদ বাড়লে বেকারত্ব সাধারণত বেড়ে যায়। এমনকি অতীতে নীতি সুদ বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কবলেও পড়েছিল। কিন্তু এবার সেরকম কিছু হয়নি; তেমন না হওয়ায় মানুষের যাপিত জীবনে বিশেষ পরিবর্তন আসেনি।
কিন্তু সম্প্রতি সে দেশে বেকারত্ব বাড়তে শুরু করেছে। জুলাই মাসে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ফেডের এই নীতি অনেক মানুষের কর্মহীনতার কারণ হতে পারে। সে জন্য জেরোম পাওয়েলের এই ঘোষণা।
এদিকে পাওয়েলের এ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব দেখা যাচ্ছে। দেশটির শেয়ারবাজারের সব সূচকই গতকাল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
অনেক দিন ধরেই বিশ্ববাজার ফেডের দিকে তাকিয়ে আছে, কবে তারা নীতি সুদহার কমাবে। নীতি সুদহার বাড়লে বাণিজ্যিক ঋণের সুদ বাড়ে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হন। নীতি সুদ কমলে সমাজে অর্থ সঞ্চালন বাড়ে। অর্থাৎ অর্থনীতিতে সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।