ক্রেডিট সুইস থেকে প্রথম প্রান্তিকে আমানতকারীরা তুলেছেন ৬,৮৬০ কোটি ডলার

রয়টার্স

সুইজারল্যান্ডের বৃহৎ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে কিছুদিন আগেই দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার তত্ত্বাবধানে আরেক সুইস ব্যাংক ইউবিএস কিনে নিয়েছে। ব্যাংকটিকে বন্ধ হওয়া থেকে বাঁচাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এবার জানা গেল, বছরের প্রথম প্রান্তিকে ক্রেডিট সুইস থেকে ৬৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন গ্রাহকেরা। ব্যাংকটির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণী সূত্রে এই সংবাদ দিয়েছে বিবিসি।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ব্যাংকটি কেমন চাপে পড়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক থেকেও গ্রাহকেরা আমানত তুলে নেওয়ার কারণে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংক দুটি বন্ধ করে দেয়। একই পরিণতি হতে পারত ক্রেডিট সুইসের। তবে সময়মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে তা এড়াতে পেরেছে ব্যাংকটি।

এদিকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের সম্পদ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ কমেছে।

আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাংকটি বলেছে, গ্রাহকদের আমানত তুলে নেওয়ার হার কমেছে। কিন্তু ২৪ এপ্রিল ব্যাংকটিতে যে আমানত আছে, তা আগের বছরের একই দিনের তুলনায় অনেক কম।

তারল্যসংকটে ভুগছিল ক্রেডিট সুইস। তারল্য বাড়াতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেয় তারা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এরপরই জানা যায়, ক্রেডিট সুইসকে ইউবিএস এজির কাছে বিক্রি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় ইউবিএস ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে কেনার প্রস্তাব দেয়।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে ক্রেডিট সুইসকে ‘মাত্র’ ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক ইউবিএস। অথচ ক্রেডিট সুইসের বাজারদর ছিল ৮০০ কোটি ডলার। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রস্তাবে সায় দেয়নি ক্রেডিট সুইস। পরে অবশ্য দাম বাড়িয়ে ৩২৩ কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়, তাতে ক্রেডিট সুইস রাজি হয়।

মার্চে তিন দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় ব্যাংক বন্ধ হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়ে বিক্রি হয়ে যায়। এতে বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধ হওয়া দুই ব্যাংক ও ক্রেডিট সুইসের শেয়ার ছেড়ে দিতে থাকেন। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অনেকটাই পড়ে যায়।

ক্রেডিট সুইসের অবস্থা কয়েক বছর ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। ২০২২ সালে ব্যাংকটির ক্ষতি হয়েছে ৮২১ কোটি ডলার, ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে খারাপ। তারাই বলেছিল, ২০২৪ সালের আগে তারা মুনাফার মুখ দেখতে পারত না। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি থেকে গ্রাহকেরা আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। এরপর ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়।

নতুন সংকট?

সিলিকন ভ্যালি (এসভিবি) ও সিগনেচার ব্যাংকের বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ক্রেডিট সুইসের বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বের আর্থিক খাতে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে অস্বস্তিকর একটা প্রশ্ন—এই ঘটনা কি আরও ধ্বংস ডেকে এনে পুরো ব্যাংকিং খাতকে পতনের পথে নিয়ে যাবে? অর্থাৎ আবারও কি ২০০৭-০৮ সালের মতো আর্থিক সংকট শুরু হবে।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে এসভিবির সঙ্গে বেয়ার স্টানর্সের তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৭-০৮ সালে যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট হয়েছিল, তার শুরুতেই ধসে পড়েছিল এই ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একটি ব্যাংকের ব্যর্থতা এবং আমানত হারানোর পরিণতিতে আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনা যদি কম সম্পদধারী ব্যাংকে এরপর ঘটে এবং তারও যদি ধস নামে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে পারে।

তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক এখন পর্যন্ত মনে করেন, এসভিবি, ক্রেডিট সুইসের মতো ঘটনা শুধু নির্দিষ্ট কোম্পানির বিষয়। এদের প্রভাব যে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের আর্থিক খাতে পড়বে, সেই সম্ভাবনা কম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বারবার বলে আসছে, সে দেশের আর্থিক খাত শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মূলত, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর যেসব সংস্কার করা হয়েছিল, সেগুলোই এখন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের সুরক্ষা দিচ্ছে। তৎকালীন সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে বর্তমান কর্মসূচির সমন্বয়ের মাধ্যমে আমানতকারীরা সুরক্ষিত আছেন।