মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা সত্ত্বেও তেলের দাম কমছে। সোমবার তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি তিন ডলারের বেশি কমে গেছে। সপ্তাহান্তে তেহরানের জ্বালানি ও পারমাণবিক অবকাঠামো এড়িয়ে ইরানের ওপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত না হওয়ায় ওই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমে এসেছে।
ব্রেন্ট ও মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট—এই উভয় ধরনের তেলের দাম আজ সোমবার দিনের শুরুতে ১ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল। প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট তেলের দাম ৩ দশমিক ১৩ ডলার বা ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৭২ ডলার ৯২ সেন্টে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৩ দশমিক ১৫ ডলার।
গত সপ্তাহে এই দুই ধরনের তেলের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছিল। ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা কতটা মারাত্মক হবে, সেটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগামী মাসের নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। ১ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের ওপর মিসাইল আক্রমণ চালিয়েছিল।
গত শনিবার খুব ভোরে তিন দফায় ইসরায়েলি বিমান ইরানে হামলা চালায়। তেহরানের আশপাশে এবং পশ্চিম ইরানে অবস্থিত মিসাইল কারখানা ও আরও কিছু স্থাপনা ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মথ্যে দীর্ঘদিন ধরেই যে বৈরিতা চলছে, তাতে সর্বশেষ সংঘাতের ঘটনা ছিল ওই হামলা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে—এমন আশঙ্কা বাড়ছিল এবং এ কারণে তেলের দাম বেড়ে যায়। সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এমএসটি মার্কির জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিচ বলেন, তেলের অবকাঠামো এডিয়ে যে সীমিত হামলা চালানো হয়েছে, তাতে সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম কমেছে।
সল কাভোনিচ আরও বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে ইরান আবার পাল্টা হামলা চালায় কি না, সে ব্যাপারে তেলের বাজার ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখবে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে তেলের দাম আবার বেড়ে যাবে।
কমনওয়েলথ ব্যাংকের বিশ্লেষক বিবেক ধর আশা করছেন, ইসরায়েল ও ইরান–সমর্থিত গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সম্ভাব্য আলোচনার দিকে তেলের বাজার নজর রাখবে। একটি নোটে তিনি বলেন, ‘যদিও ইসরায়েল ইরানে সীমিত হামলা করেছে, আমাদের মনে হচ্ছে, ইসরায়েল ও ইরান–সমর্থিতরা (হামাস ও হিজবুল্লাহ) একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধিবিরতির পথে রয়েছে।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটি আগামী তিন মাসের জন্য তাদের ব্রেন্ট তেলের দামের প্রত্যাশা প্রতি ব্যারেল ৭৪ ডলার থেকে কমিয়ে ৭০ ডলার করেছে। অর্থাৎ স্বল্প মেয়াদে তারা কম ঝুঁকি দেখছে। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক ম্যাক্স লেটন একটি নোটে এ কথা জানিয়েছেন।
গত অক্টোবরে তেল রপ্তানিকারক দেশের জোট ওপেক ও তাদের সহযোগীরা তেল উৎপাদন নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখে। ওই নীতিতে বলা হয়েছিল, আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে তেলের উৎপাদন বাড়ানো হবে। ওপেক প্লাস জোট আবার আগামী ১ ডিসেম্বর এক বৈঠকে বসবে। এ বৈঠকের পর জোটের একটি পূর্ণাঙ্গ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।