ফোর্বসের তালিকা

ধনীদের তালিকায় চতুর্থ থেকে ৪০তম স্থানে নেমে গেলেন আদানি

গৌতম আদানি
ফাইল ছবি

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গোষ্ঠীর রক্তক্ষরণ চলছেই। গত এক মাসে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে গেছে। তাতে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায়ও ৩৬ ধাপ নিচে নেমে গেছেন গৌতম আদানি।

আজ সকালে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির অবস্থান ৪০তম। সম্পদমূল্য ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

বাস্তবতা হলো, গত এক মাসে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন যে পরিমাণ কমেছে, তাতে অনেকের চোখ কপালে ওঠার উপক্রম হয়, কারণ অনেক কোম্পানির সর্বমোট বাজার মূলধনই এত নয়।

মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’-এর হিসাবে, গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হওয়ার পর গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য ৩২০ কোটি ডলার কমেছে। তাতে ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় তাঁর অবস্থান এখন ৪০তম। অথচ হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের আগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন আদানি। হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের পর গত এক মাসে তাঁর সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এক দশক ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তার ওপর ভর করে গৌতম আদানির সম্পদও ফুলেফেঁপে ওঠে। বিশেষ করে গত দুই বছরে আদানির সম্পদমূল্য বিপুল হারে বেড়েছে।

ফোর্বস-এর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য ছিল ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৮৯০ কোটি ডলার। আর ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তাঁর সম্পদমূল্য ছিল ১১৯ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, মরিশাসসহ বিভিন্ন দেশে ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ফুলেফেঁপে ওঠে। তাঁর ভাই বিনোদ আদানির মাধ্যমে এসব কারসাজি হয়েছে। এমনকি আম্বুজা সিমেন্ট ও অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানি (এসিসি) কেনার পর খোলাবাজার থেকে শেয়ার কিনতেও ভুয়া কোম্পানিগুলোর পুঁজি ব্যবহৃত হয়েছে।

হিনডেনবার্গের দাবি, আদানি সাম্রাজ্যের বিস্তার মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের (গত সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ২৬ লাখ কোটি রুপি) ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

এদিকে হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে আদানি গোষ্ঠী। আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদানির কোম্পানিগুলোর যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক চুক্তি আছে, তাতে আপাতত নগদের জোগান এবং ঋণ পরিশোধে সমস্যা হওয়ার শঙ্কা কম। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এরই মধ্যে বড় অঙ্কের বেশ কিছু ঋণও আগেভাগে শোধ করেছে তারা।

আদানি গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রের এনরনের সঙ্গেও তুলনা করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানি এনরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ঋণের অঙ্ক কম দেখিয়ে এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি লুকিয়ে হিসাবের খাতায় বড় অঙ্কের মুনাফা দেখিয়েছিল তারা।

কোম্পানির মুনাফা বা আর্থিক প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, এসব তথ্য শেয়ারের দাম প্রভাবিত করে। এনরনের আর্থিক কারসাজির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দামে বড় ধরনের দরপতন হয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এনরনকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর মাসখানেক ধরে ধারাবাহিকভাবে তাদের শেয়ারদর কমছে। তাই অনেকেই আদানির সঙ্গে এনরন কেলেঙ্কারির মিল খুঁজছেন।

খনি বন্ধক রেখে ঋণ

আদানি গোষ্ঠীর ঋণের পরিমাণ বিপুল। এসব ঋণ পরিশোধ করতে তারা নতুন করে প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঋণ চাইছে। অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনি বন্ধক রেখে সেই ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছে আদানি গোষ্ঠী। ‘ইকোনমিক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইকোনমিক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গোষ্ঠী বর্তমানে বিশ্বের একাধিক নামীদামি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আদানি গোষ্ঠীর ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘নর্থ কুইন্সল্যান্ড এক্সপোর্ট টার্মিনালকে’ (এনকিউএক্সটি) এই তহবিল সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।