চীনের অর্থনীতি পুনরায় চাঙা করা যেসব কারণে সহজ হবে না

চীনে উৎপাদন কার্যক্রম টানা দ্বিতীয় মাসের মতো হ্রাস পেয়েছে
  ফাইল ছবি: রয়টার্স

কোভিড-উত্তর সময়ে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে, এমন ধারণাই করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশটির পুনরুদ্ধার এখন পর্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির। শুরুতে মানুষের কিছু পুঞ্জীভূত চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তাতে বেচাকেনা বেড়েছিল, কিন্তু এপ্রিল মাসের পরিসংখ্যান আশাজনক নয়।

পরিণামে চীনের স্টক মার্কেটের সূচক পয়েন্ট হারিয়েছে; সরকারি বন্ডের সুদহার কমেছে ও মুদ্রার দরপতন হয়েছে।  

দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে এই পরিস্থিতির যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ।

কথা হচ্ছে, মে মাসে চীনের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের উন্নতি হবে কি? মাসের শেষ দিনে দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডাইসেস বা পিএমআই প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, গত মাসে দেশটির সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার আরও কমেছে এবং উৎপাদন কার্যক্রম টানা দ্বিতীয় মাসের মতো হ্রাস পেয়েছে।

তবে সাইসিন নামের আরেক উৎপাদন সূচকের চিত্র অবশ্য আশাজাগানিয়া, কারণ এই সূচকে অভ্যন্তরীণ ভারী শিল্পে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এই উভয় পিএমআই থেকেই বোঝা যায়, উৎপাদকদের কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত পণ্য-উভয়ের মূল্য বেড়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদ আবার মনে করেন, মিলগেটে পণ্যের মূল্য এক বছর আগের তুলনায় ৪ শতাংশ কমেছে। এ কারণে শিল্পের মুনাফা কমছে; পরিণামে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ কমছে। এতে মূল্যস্ফীতির সূচক নিম্নমুখী হবে।

এই বাস্তবতায় চীনের অর্থনীতি দ্বৈত ধাক্কার মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন নোমুরা ব্যাংকের কর্মকর্তা তিং লু। ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, এক প্রান্তিক থেকে আরেক প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে, যদিও আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তা ভালোই দেখাবে।

বিশ্বের অন্যান্য স্থানে দেখা যাচ্ছে, একদিকে যখন প্রবৃদ্ধির গতি কমছে, তখন আরেক দিকে মূল্যস্ফীতির চাপও কমছে। চীনের এই পরিসংখ্যানের গতি অবশ্য একদিকেই মুদ্রানীতির রাশ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও ছাড় দেওয়া।

কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারীই যে উদ্বিগ্ন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি হ্রাসের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কিন্তু গত বছর অর্থনীতি দুর্বল থাকার কারণে এ বছর বিশেষ প্রণোদনা ছাড়াই চীন ৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছে দেশটির সরকার।

তবে মরগ্যান স্ট্যানলি ব্যাংকের বিশ্লেষক রবিন সিং ইকোনমিস্টকে বলেছেন, শিগগিরই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে উৎপাদন খাতের পিএমআই টানা কয়েক মাসের জন্য ৫০-এর নিচে নেমে গেলে নীতিপ্রণেতারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তাঁর বিশ্বাস, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুলাই মাসে পুঁজি সংরক্ষণের হার হ্রাস করবে, যদি আরও আগে তা না হয়। এ ছাড়া চীনের ব্যাংকগুলো অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে বলেও তিনি মনে করেন।

অন্যরা অবশ্য এতটা আশাবাদী নন। তিং লু মনে করেন, সরকার কিছু না কিছু করবে, কিন্তু ছোট ছোট পদক্ষেপে সমস্যার তেমন একটা সমাধান হবে না; আবার বড় কিছু করার ক্ষেত্রে নানা বাধা আছে। সুদহার কমানো হতে পারে, কিন্তু তাতে আবার ব্যাংকের মুনাফা কমে যেতে পারে। ব্যাংক খাত এমনিতেই ঋণ দিয়ে ক্ষতির মুখে আছে, সেই সঙ্গে সুদহার কমালে তার আরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

স্থানীয় সরকারকে তারা আরও ঋণ দিতে পারে, যদিও সেই অভিজ্ঞতা তাদের সুখকর নয়, অনেক বাজে প্রকল্পে অর্থ অপচয় হয়েছে একসময়। পরিবারকে সরাসরি নগদ সহায়তা দিতে পারে তারা, তবে সেই ব্যবস্থা করতেও বেশ সময় লেগে যাবে।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, অতীতে সরকার সম্পদ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করে দ্রুত অর্থনীতি চাঙা করতে পারত। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে সরকারের হাতে অস্ত্র কমে গেছে।