সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে বড় বিনিয়োগ পেতে চলেছে উত্তর আফ্রিকার দেশ মিসর। দেশটির ভূমধ্যসাগরের উপকূলে একটি প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ইউএইর বিনিয়োগ হোল্ডিং ফার্ম এডিকিউ।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউএইর তিনটি প্রধান সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিলের মধ্যে একটি হলো এডিকিউ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা মিসরের রাস এল হেকমা উপদ্বীপের উন্নয়নের জন্য নেওয়া মেগা প্রকল্পে এ বিনিয়োগ করবে। কায়রো থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে রাস এল হেকমা অবস্থিত।
এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ইউএইর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মিসর। চুক্তি স্বাক্ষরের পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি বলেন, এডিকিউর সঙ্গে করা এই চুক্তি মিসরের জন্য পরবর্তী সময়ে আরও ১৫ হাজার কোটি (১৫০ বিলিয়ন) ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারে।
এ বিনিয়োগের মাধ্যমে নানা কারণে অর্থনৈতিক চাপে থাকা মিসর কিছুটা স্বস্তি পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই বিনিয়োগ চুক্তির ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ চুক্তি ঘোষণার সংবাদে শুক্রবার মিসরের সার্বভৌম ডলার বন্ডের দাম বেড়েছে।
হাইড্রোকার্বন খাতের বাইরে বড় আকারের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিসর। ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়া সর্বশেষ আর্থিক বছরে দেশটিতে নেট এফডিআই ছিল ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার। সে বিবেচনায় ইউএইর বিনিয়োগ দেশটির জন্য বড় সুসংবাদ বলা যায়।
রাস এল হেকমা উপদ্বীপটি মিসরের আলেকজান্দ্রা শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। উন্নত মানের পর্যটন রিসোর্ট ও সাদা বালুর সমুদ্রসৈকতের জন্য গ্রীষ্মকালে ধনী মিসরীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয় উপদ্বীপটি। প্রায় ১৭০ বর্গ কিলোমিটারের রাস এল হেকমা অঞ্চলটি আয়তনের দিক থেকে আবুধাবির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।
এডিকিউ বলেছে, তারা এখানে ‘নেক্সট জেনারেশন সিটি’ বা ‘পরবর্তী প্রজন্মের শহর’ নির্মাণ করবে। এ কাজ শুরু হবে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে। পরিকল্পিত এ শহরে থাকবে বিনিয়োগ অঞ্চল, প্রযুক্তি ও হালকা শিল্প এলাকা, বিনোদন পার্ক, মেরিনা ও বিমানবন্দর। পর্যটন ও আবাসন খাতেও উন্নয়ন করবে তারা।
চুক্তি অনুসারে, মেগা এই প্রকল্পে মিসর সরকারের হিস্যা থাকবে ৩৫ শতাংশ।
মিসরের প্রধানমন্ত্রী মাদবুলি জানান, চুক্তি স্বাক্ষরের পরের সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং বাকি অর্থ পরের দুই মাসের মধ্যে আসবে। যদিও এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডলার আমানত থেকে মিসরীয় পাউন্ডে রূপান্তর করে নেওয়া হবে।
বিভিন্ন কারণে মিসর একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, সরকারি ব্যয় ও স্থানীয় ব্যবসার ওপর বাড়তি চাপ এসব সংকটের মধ্যে অন্যতম। গত গ্রীষ্মে মিসরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। দেশটিতে ঋণের বোঝাও দিন দিন বাড়ছে।
গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের কারণে নতুন চাপে পড়েছে মিসর। যুদ্ধের জেরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা করছে। এ কারণে সুয়েজ খাল থেকে জাহাজ চলাচল কমায় রাজস্ব হারাচ্ছে দেশটি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আরও বাড়ছে।
মিসরকে সহায়তা দিতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৩০০ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই কর্মসূচির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী মিসর। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আরব আমিরাতের এই বিনিয়োগ মিসরের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।