পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল বিক্রি অব্যাহত আছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ইনস্টিটিউটের (আইইএ) তথ্যানুসারে, রাশিয়ার মাসিক তেল বিক্রির পরিমাণ ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, মার্চে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রির পরিমাণ গত বছরের এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। মার্চে রাশিয়ার দৈনিক তেল ও তেলজাতীয় পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছয় লাখ ব্যারেল বেড়েছে। এতে গত মাসে তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রি করে রাশিয়ার আয় হয়েছে প্রায় ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলার।
তবে তেল বিক্রি বাবদ রাশিয়ার আয় গত বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কম। এর কারণ, ইউরোপীয়রা রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দেশটির তেল ক্রেতার সংখ্যা এখন অনেক সীমিত। পশ্চিমা বিধিনিষেধের কারণে ক্রেতারা অনেক দর-কষাকষির সুযোগ পাচ্ছেন, ছাড় আদায় করতে পারছেন। জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সমুদ্রপথে অপরিশোধিত তেল বিক্রি ও পরিশোধিত তেল, যেমন ডিজেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এতে রাশিয়ার ক্রেতা কমলেও নতুন ক্রেতা জুটেছে, যেমন চীন ও ভারত। এ দেশ দুটি যথাক্রমে বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশ। কিন্তু দেশ দুটি অনেক ছাড়ে তেল কিনছে। রাশিয়ার হাতেও গত্যন্তর না থাকায় ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছে।
তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার একেবারে ক্ষতি হয়নি, বিষয়টি তেমন নয়। গত সপ্তাহেই রাশিয়া সরকারের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, জ্বালানি খাত থেকে আয় কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির বাজেটঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। সামগ্রিকভাবে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় চলতি বছর রাশিয়ার আয় কমেছে ২১ শতাংশ।
আইইএর তথ্যানুসারে, রাশিয়ার বাজেটের ৪৫ শতাংশ আসে তেল ও গ্যাস খাতের রাজস্ব থেকে।
এদিকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে ওপেক ও ওপেক-বহির্ভূত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো চলতি মাসেই তেল উত্তোলন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বছরের শেষ ভাগে দৈনিক তেল উৎপাদন চার লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে। তবে চীন কোভিডজনিত নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসায় বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বছরের শেষ ভাগে বিশ্ববাজারে দৈনিক তেলের চাহিদা ১০২ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ২০ লাখ ব্যারেলে উঠতে পারে।
এতে বাজারে তেলের সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে এবং পরিণামে দাম আরও বাড়তে পারে। অপরিশোধিত তেলের দর আবার ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে তেলের দাম আবার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে আমদানিকারী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। গত এক বছরে তেলের বর্ধিত দাম ও ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণে এ দেশগুলোকে অনেক ভুগতে হয়েছে। তেলের দাম আবার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে বিষয়টি তাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হবে।
বিশ্বের অনেক সংস্থাই এ বছর মন্দার আশঙ্কা করেছিল। সম্প্রতি সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। কিন্তু তেলের দাম আবার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে মন্দার আশঙ্কা আবারও ঘনীভূত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
২ এপ্রিল ওপেক ও ওপেক-বহির্ভূত সহযোগী তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো দৈনিক ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধাক্কায় বাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়। আজ সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৬ ডলারের ওপরে। অর্থাৎ ওপেকের তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।