কফিপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ, কফির দাম শিগগিরই বাড়তে পারে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কফির দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার অ্যারাবিকা বিনের দাম প্রতি পাউন্ড (০.৪৫ কেজি) ৩ দশমিক ৪৪ ডলার ছাড়িয়েছে; চলতি বছর কফির দাম ৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে রোবাস্টা বিনের দামও সেপ্টেম্বর মাসে নতুন রেকর্ড পড়েছে। খবর বিবিসি
কফি ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছেন, এ বছর একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই কফি উৎপাদক দেশ ব্রাজিল ও ভিয়েতনামে খারাপ আবহাওয়ার কারণে কফি উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে কফির জনপ্রিয়তা বাড়ছেই।
ব্রাজিল বিশ্বের বৃহত্তম কফি উৎপাদনকারী দেশ। চলতি বছর খরা ও তুষারঝড়ের মতো চরম আবহাওয়া ছিল এই দেশে, যার প্রভাব পড়েছে কফি উৎপাদনে। অন্যদিকে রোবাস্টা কফির অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী দেশ ভিয়েতনামে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে কফির উৎপাদন কমেছে।
একজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে জানিয়েছেন, কফি ব্র্যান্ডগুলো আগামী বছরের শুরু থেকে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় কফি কোম্পানিগুলো দাম না বাড়িয়ে নিজেরা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ছিল গ্রাহকদের খুশি রাখা এবং বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিগগিরই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
জেডিই পিটস, নেস্লেসহ অন্যান্য ব্র্যান্ড এত দিন উচ্চ মূল্যের চাপ নিজেরাই সহ্য করেছে। বাজারের হিস্যা ধরে রাখার জন্য তারা এটা করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং সরবরাহ সংকটের কারণে তাদের অনেকেই ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে সুপারমার্কেটে কফির দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
ইতালির কফি কোম্পানি লাভাজ্জা বিবিসি নিউজকে জানিয়েছে, ‘গুণগত মান নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার; গ্রাহকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এটাই মূল ভিত্তি।’
তারা গ্রাহকদের সন্তুষ্টি ও বাজারের আস্থা ধরে রাখতে অনেক দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাঁচামালের দাম এতটাই বেড়েছে যে এই অতিরিক্ত খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে; এখন দাম বাড়ানোই একমাত্র বিকল্প।
নেস্লে কফি ব্র্যান্ড বিভাগের প্রধান ডেভিড রেনি বলেন, ‘কফির দাম বাড়লে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে না, এমনটা হওয়ার কথা নয়। এর প্রভাব আমাদের ওপর অনেক বেশি।’ তিনি আরও বলেন, নেস্লে কফির দাম বাড়ানো ও মোড়কের আকারে পরিবর্তন আনতে হবে।
অর্থাৎ কফির কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান দাম এবং বাজারের চাপের কারণে বড় কফি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসায়িক কৌশলে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। দাম বাড়ানোর পাশাপাশি তারা মোড়কের আকার কমানোর মতো পদক্ষেপও নিতে পারে, খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে এর বিকল্প নেই।
কফির সর্বশেষ রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে, যখন অস্বাভাবিক তুষারপাত ব্রাজিলের কফি বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্যাক্সো ব্যাংকের পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, ২০২৫ সালে ব্রাজিলের কফির উৎপাদন কেমন হবে, তা নিয়ে নিয়ে উদ্বেগ থেকেই বর্তমান এই মূল্যবৃদ্ধি।
ওলে হ্যানসেন আরও বলেন, ব্রাজিল আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হয়েছে। এরপর অক্টোবর মাসে ভারী বৃষ্টি হয়, যার কারণে ফুল ফোটার পর্যায়ে কফিগাছের ক্ষতি হতে পারে। ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সে কারণে।
রোবাস্টা বিনের সরবরাহও সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই জাতের কফির বৃহত্তম উৎপাদক ভিয়েতনামও খরা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়েছে। এই চরম আবহাওয়া কফি উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
কফি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক বেচাকেনা হওয়া পণ্য। পরিমাণের দিক থেকে অপরিশোধিত তেলের পরেই এর স্থান। কফির জনপ্রিয়তাও ক্রমাগত বাড়ছে। যেমন গত এক দশকে চীনে কফি সেবনের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
কফির চাহিদা এখনো বেশি, যদিও উৎপাদক ও প্রস্তুতকারকদের মজুত কম বলে জানিয়েছেন এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের কফি মূল্য বিশ্লেষক ফেরান্দা ওকাডা। তিনি আরও বলেন, কফির মূল্য বৃদ্ধির এই প্রবণতা আরও কিছুদিন থাকার কথা।