বোয়িং
বোয়িং

এবার বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের সুপারিশ

বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের নিরাপত্তাজনিত চুক্তি লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের সুপারিশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা। দেশটির বিচার বিভাগের কাছে এই সুপারিশ করেছেন তাঁরা।

মার্কিন বিচার বিভাগ এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বোয়িংকে বিচারের আওতায় আনা হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের দুটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই দুর্ঘটনার ভুল তথ্য দিয়ে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আকাশপথের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রকদের বিভ্রান্ত করেছে বোয়িং—এমন অভিযোগ আসার পর তারা সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার করে। ২০২১ সালে একটি নিষ্পত্তি চুক্তি করার পর ফৌজদারি অভিযোগ থেকে রক্ষা পায় তারা। এখন তাদের বিরুদ্ধে সেই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে; সে জন্য ফৌজদারি অপরাধ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন বিচার বিভাগ বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মামলা না করতে সম্মত হয়েছিল এই শর্তে যে তারা নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা মেনে চলবে এবং নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেবে। বোয়িং তদন্ত নিষ্পত্তি করতে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা দিতেও রাজি হয়েছিল।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আলাস্কা এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের একটি দরজার প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনায় বোয়িংয়ের সেই প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করার বিষয়টি সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা গত মাসে তা নিশ্চিত করেছিলেন।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বোয়িং মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মার্কিন বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্রের মন্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

গত মাসে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বোয়িং সেই নিষ্পত্তি চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলছে বলে দাবি জানিয়ে বিচার বিভাগের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। সংবাদে বলা হয়েছে, মার্কিন বিচার বিভাগ ২০২১ সালে করা চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে বা বোয়িংকে কঠোর শর্ত দিতে পারে, যেমন জরিমানা ও মনিটরিং (তৃতীয় পক্ষের সরাসরি পর্যবেক্ষণ)।

বোয়িং অবশ্য জরিমানা দিয়ে মনিটরিংয়ের শর্ত মেনে নিতে পারে। কিন্তু তাদের আশঙ্কা, দোষ স্বীকার করলে ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যে চুক্তি তাদের আছে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে।

দুটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের পৃথক কিন্তু প্রায় একই রকম দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন্য নিহত হয়েছিলেন।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর জাভা সাগরে প্রথম বোয়িং বিমানটি বিধ্বস্ত হলে লায়ন এয়ারের ১৮৯ জন যাত্রীর সবাই মারা যান। এরপর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমান ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে রওনা দেওয়ার ছয় মিনিট পরে বিধ্বস্ত হয়। সেই দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন যাত্রীর সবাই মারা যান; দুটি দুর্ঘটনার পেছনেই ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম দায়ী ছিল।

এই ঘটনায় মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থিত হয়ে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ ক্যালহুন ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, বোয়িংয়ের ঘাটতি কেবল নথিপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সংস্থাটির প্রশাসক মাইক হুইটেকার এর আগে সিএনএনকে বলেছিলেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন ও সংযোজনপ্রক্রিয়ায় গলদ আছে, যেমন কাজের আদেশ দেওয়া ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার। তিনি বলেছেন, ঠিক জায়গায় ঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, বোয়িংকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বোয়িংয়ের সামগ্রিক পরিচালনাপদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্বারোপ করেন।