প্রমোদতরি—নামটি শুনলেই মনে হয়, এর সঙ্গে বিলাসব্যসনের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি বাস্তবে সে রকমই। চলতি বছর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের প্রমোদতরি সাগরে ভাসার অনুমতি পায়। প্রমোদতরিটি ৪১৭ ফুট দীর্ঘ। একে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা প্রমোদতরির আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। সুইমিং পুল থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড—কী নেই সেখানে।
ধনীরা বিলিয়ন বিলিয়ন বা শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে এসব প্রমোদতরি নির্মাণ করান। এডুওয়ার ডট কমের সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রমোদতরি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৪ দশমিক ৮ বা ৪৮০ কোটি ডলার। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরি কোনগুলো। সেগুলো নির্মাণে কত ব্যয় হয়েছে, কীই-বা আছে সেগুলোতে।
হিস্টরি সুপ্রিম
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রমোদতরি হিস্টরি সুপ্রিম তৈরিতে আনুমানিক ৪৮০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। স্বর্ণ, প্লাটিনাম থেকে শুরু করে প্রকৃত ডাইনোসরের হাড় প্রমোদতরি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। জানা যায়, মালয়েশীয় ব্যবসায়ী রবার্ট কুয়োক এই প্রমোদতরির মালিক।
একলিপ্স
প্রমোদতরি একলিপ্সের মালিক রাশিয়ার রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী রোমান আব্রামোভিচ। এই প্রমোদতরিতে ২৪টি কেবিন, দুটি হেলিপ্যাড, দুটি সুইমিং পুল, ডিসকো হলসহ নানা ধরনের সুবিধা আছে। এই প্রমোদতরি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার।
স্ট্রিটস অব মোনাকো
ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের মোনাকো সিটির আদলে নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্বের তৃতীয় ব্যয়বহুল প্রমোদতরি মোনাকো। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। মোনাকো শহরের মন্টে কার্লো ক্যাসিনো থেকে শুরু করে গো-কার্ট ও মোনাকো গ্রাঁ প্রি—সবই আছে এই প্রমোদতরিতে। এই প্রমোদতরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা ওয়েসিস বা মরূদ্যানের আদলে তৈরি করা হয়েছে, যেটা মূলত বিনোদনকেন্দ্র।
আজ্জাম
৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত আজ্জাম আবুধাবির সাবেক শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মালিকানাধীন ছিল। তিনি ২০২২ সালের মে মাসে মারা যান। এরপর এই প্রমোদতরি কার মালিকানায় আছে, তা জানা যায় না।
আল সাইদ
এটিও ৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত। বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ এই প্রমোদতরিতে ৭০ জন অতিথি ও ১৭৪ জন কর্মী একসঙ্গে চড়তে পারেন। ওমানের সুলতান এই প্রমোদতরির মালিক।
টোপাজ
আবুধাবির ধনকুবের মনসুর আল নাহিয়ান বিলাসবহুল প্রমোদতরি টোপাজের মালিক। ১৪৭ মিটার লম্বা ও ২১ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের এই প্রমোদতরি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৫২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১২ সালে মে মাসে এটি সমুদ্রে নেমেছে।
সেইলিং ইয়ট এ
এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও উদ্ভাবনী প্রমোদতরি। রাশিয়ার ধনকুবের আন্দ্রে মেলনিশেঙ্কোর মালিকানাধীন এই প্রমোদতরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়েছে।
দুবাই
৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত দুবাই নামের এই প্রমোদতরি মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুমের মালিকানাধীন। এতে ৯০ জন অতিথির খাবারের ব্যবস্থাসহ আহার কক্ষ, একটি ডিসকো, সিনেমা হল, স্কোয়াশ কোর্ট, ১০টি সুইমিং পুলসহ আরও অনেক বিলাসী উপাদান আছে।
সারেন
বিলাসবহুল এই প্রমোদতরিতে ১২টি সুইট আছে। সেখানে ২৪ জন অতিথি থাকতে পারেন। সেই সঙ্গে আছে নাচের ফ্লোর, স্পা, বিউটি স্যালুন, বিচ ক্লাব, ব্যায়ামাগার। ৩৫ কোটি ডলারের নির্মিত এই প্রমোদতরির মূল মালিক ছিলেন ইয়ুরি শেফলার। পরবর্তীকালে সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এটি কিনে নেন। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলার।
র্যাডিয়্যান্ট
৩২ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত প্রমোদতরি আরব আমিরাতের ধনকুবের আবদুল্লা আল ফুত্তাইমের মালিকানাধীন। এতে আছে একাধারে সুইমিং পুল, বিচ ক্লাব, ম্যাসাজ রুম, ব্যায়ামাগার, চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদি।