চীনের উৎপাদন কার্যক্রম জানুয়ারি মাসে টানা চতুর্থ মাসের মতো সংকুচিত হয়েছে। দেশটির এক সরকারি জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময় ধরেই চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। এ তথ্যে বোঝা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের প্রথম মাসেও দেশটির অর্থনীতি শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের উৎপাদন খাতের সূচক পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) জানুয়ারি মাসে অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। ডিসেম্বরে যার মান ছিল ৪৯, জানুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ দশমিক ২। কিন্তু তারপরও পিএমআই সূচকের মান ৫০-এর নিচে। সাধারণ হিসাব অনুসারে, পিএমআই সূচকের মান ৫০-এর ওপরে থাকলে ধরে নেওয়া হয়, উৎপাদন বেড়েছে। এর নিচে থাকার অর্থ হলো, উৎপাদন সংকুচিত হয়েছে।
অর্থাৎ চীনের অর্থনীতি এখনো কোভিড-১৯-এর প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশটির চান্দ্র নববর্ষের প্রভাবের কারণেও উৎপাদন সংকুচিত হয়ে থাকতে পারে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি দেশটির বৃহত্তম উৎসব চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপিত হবে। উৎসবের আগে কারখানাগুলো শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পিন পয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিউয়ি ঝ্যাং বলেন, মূল্যহ্রাসের প্রভাব আছে চীনের অর্থনীতিতে, সে কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্তিমিত।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, চীনের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া। এনবিএসের জরিপে দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে চীনের নতুন পণ্য রপ্তানির সূচকের মান ছিল ৪৭ দশমিক ২, টানা ১০ মাস ধরে যা কমেছে।
গত মাসে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্যান গংসেং সংবাদ সম্মেলন করে অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাংকের রিজার্ভ সংরক্ষণের হার হ্রাস করেন।
সামগ্রিকভাবে চীনের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে, কিন্তু সেই আবাসন খাতের অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় সরকারের ইউনিটগুলো ঋণে জর্জরিত। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ এখনো উচ্চমূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে, তখন চীনে চলছে আছে মূল্য সংকোচনের চাপ। বৈশ্বিক অর্থনীতির চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, চীন এখনো অনেকটা রপ্তানিনির্ভর।
চীনের উৎপাদন খাত সংকুচিত হলেও দুই মাস পর সেবা খাত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে, কিন্তু নির্মাণ খাতের পিএমআই সূচক প্রবৃদ্ধির হার খুবই কম। এ ছাড়া উৎপাদন ও সেবা খাতের কম্পোজিট পিএমআই জানুয়ারি মাসে চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে—ডিসেম্বর মাসে যা ছিল ৫০ দশমিক ৩, জানুয়ারিতে তা ৫০ দশমিক ৯-এ উঠেছে।
এদিকে চীনের জন্য সুখবর হলো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ চলতি বছরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে। অক্টোবরে তাদের পূর্বাভাস ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ, জানুয়ারির পূর্বাভাসে তারা সেটা করেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার বদৌলতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে আইএমএফ। এ ছাড়া দেশটির আবাসন খাত যতটা দুর্দশার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা হয়নি।
প্রবৃদ্ধি নিয়ে চীনের সরকারি পূর্বাভাস মার্চের আগে প্রকাশিত হবে না। কিন্তু নীতিপ্রণেতারা আশা করছেন, চলতি বছরও চীন গত বছরের মতো ৫ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।