ডেনমার্কের ফলের জুস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কো–রো তাদের সানকুইক ব্র্যান্ডের জুস কারখানা স্থাপন করেছে বাংলাদেশে। স্থানীয় শিল্প গ্রুপ এসিআইয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এসিআই কো–রো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে এ কারখানা করেছে তারা।
আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বড় সাদারদীয়ায় নতুন এ কারখানার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার, এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ দৌলা এবং এসিআই কো–রো বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিলস রনো উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে সানকুইক ব্র্যান্ডের ফ্রুট ড্রিংক বাজারজাত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগে গঠিত হয় এসিআই কো-রো বাংলাদেশ লিমিটেড। ইউরোপীয় মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সানকুইক ব্র্যান্ড ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে কৃত্রিম রং, ফ্লেভার, চিনি ও প্রিজারভেটিভ ছাড়া ভোক্তাদের পছন্দের বিভিন্ন স্বাদের ফ্রুট ড্রিংক সরবরাহ করে আসছে। বাংলাদেশেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবর্তিত রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুণগত মান ও স্বাদের জুস সরবরাহ করবে কোম্পানিটি।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ বলেন, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভালো সাফল্য অর্জন করেছে। সরকার কৃষি খাতে বেশ কিছু নীতি সংস্কার করেছে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং দেশে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ফসল কাটার পরে ক্ষতি কমানো, কৃষকের মুনাফা বৃদ্ধি, মান নিশ্চিত করা, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, জলবায়ু সমস্যা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন প্রভৃতি।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কৃষিতে বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিনিয়োগ খাতের মধ্যে রয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন ও বাণিজ্যিকীকরণ, বিশেষায়িত ও বহুমুখী কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ এবং ফসল উৎপাদন–পরবর্তী ও সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, ফলনের ব্যবধান কমানো ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
বাংলাদেশকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বাজার উল্লেখ করে আব্দুস শহীদ বলেন, আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। এ সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীরা কাজে লাগাতে পারেন।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অভ্যন্তরীণ খাদ্যের চাহিদা মেটানো ও শিল্পের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা। এগুলো অর্জনের জন্য আমরা শক্তিশালী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেন, বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে খাদ্য ও কৃষি খাতে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। বাণিজ্যিক ও সরকারি উভয় পর্যায়েই দুই দেশ ভালো করছে। বাংলাদেশের এসিআইয়ের সঙ্গে ডেনমার্কের কোম্পানি কো–রোর যৌথ উদ্যোগ ব্যবসায়ের পাশাপাশি জ্ঞান বিনিময় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি করবে।
কো-রো প্রেসিডেন্ট সোরেন হোম ইয়েনসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার একটি বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে রয়েছে। এসিআই কো-রো বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে আমরা এই বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে সানকুইক ফ্রুট ড্রিংক দেশে বাজারজাত করার পাশাপাশি রপ্তানিরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ দৌলা বলেন, ‘যুগোপযোগী ও উন্নত মানের স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সানকুইক ফ্রুট ড্রিংক উৎপাদন শুরু হয়েছে। নতুন এই কারখানার উদ্বোধন দেশের ফ্রুট ড্রিংক বাজারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’