জাপানের মুদ্রা ইয়েন ও চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মতো ভারতের মুদ্রা রুপিরও দরপতন হয়েছে। গতকাল সোমবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৮৩ পেরিয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য ১ ডলারের বিপরীতে রুপির মান দাঁড়ায় ৮৩ দশমিক শূন্য ৮।
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ডলার বিক্রি করে বাজারে হস্তক্ষেপ করলে রুপির দর আবার কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
সোমবার দিন শেষে ডলারের বিপরীতে রুপির দর দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৯৫, যা ছিল গত শুক্রবারের তুলনায় ১১ পয়সা বেশি। তবে দিন শেষেও রুপির ওপর চাপ অব্যাহত ছিল। বাজারের নির্ধারিত সময়ের পরবর্তী লেনদেনে রুপির দর ৮৩ দশমিক ১১-এ নেমে যায়, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে রুপির সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছিল, সেদিন প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮৩ দশমিক ২৯ রুপি পাওয়া গিয়েছিল। তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছিল। এ কারণে রুপির সর্বোচ্চ দরপতন হয়। এবারও মূলত সে কারণেই রুপির দরপতন হচ্ছে।
বাজারে জোর আলোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা এখনো শেষ হয়নি, আবারও তারা সুদহার বাড়াতে পারে। সেই আশঙ্কায় রুপিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দেশের মুদ্রার দরপতন হচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান এবিক্সক্যাশ ওয়ার্ল্ড মানির নির্বাহী পরিচালক হরিপ্রসাদ এমপি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘আরও কয়েক মাস রুপির ওপর এ চাপ অব্যাহত থাকবে। তবে আরবিআই রুপির দরপতন ঠেকাতে বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মূলত চীনের অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে ডলারের দর বাড়ছে।’
হরিপ্রসাদ এমপি আরও বলেন, মধ্য মেয়াদে ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৮১ দশমিক ৯ থেকে ৮৩ দশমিক ১-এর মধ্যে থাকবে। কিছুটা ওঠানামাও হবে, তবে বড় ধরনের উত্থান-পাতন হবে না।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, বাজার জানে, শক্তিশালী ডলারের কারণে রুপির দরপতন হবে। তবে ভারতের অর্থনীতির বহিস্থ খাতে তেমন চাপ নেই, চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি ভারতে বিদেশি পুঁজির আগমনের ধারাও বেশ শক্তিশালী।
এদিকে গত মাসে রুপির দরবৃদ্ধি ঠেকাতে এবং বিদেশি মুদ্রার মজুত বাড়াতে আরবিআই বাজার থেকে ডলার কিনেছে। তবে ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে আরবিআই হয়তো চাইবে, রুপির দর এশিয়ার অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকুক।
এদিকে গতকাল ডলার ইনডেক্সের মান জুলাইয়ের ৭ তারিখের পর সর্বোচ্চ ১০২ দশমিক ৯৪-এ ওঠে, চলতি মাসে এ সূচকের মান ১ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ ছয়টি সমমানের মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর বাড়ছে।
অন্যদিকে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার না বাড়ালেও অপরিবর্তিত রাখবে।
নিকট ভবিষ্যতে, অর্থাৎ চলতি বছর তারা আবারও নীতি সুদহার বাড়াতে পারে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। তা নির্ভর করবে মূলত আগস্টের পরিসংখ্যানের ওপর। ফেড নীতি সুদহার বাড়াতে থাকলে ডলারের দর বাড়বে, কমবে অন্যান্য মুদ্রার মান।