রাশিয়া ও সৌদি আরব তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তে আরও এক মাস অনড় থাকবে—এই খবরে আজ সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম মধ্য এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। তবে পরে তা আবার কিছুটা কমেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আজ ভোররাতে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দর ২৫ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৬ দশমিক ৪৯ ডলারে ওঠে। তবে সকাল ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৬ দশমিক ১৭ ডলার। একইভাবে ভোররাতে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৩ দশমিক ০৫ ডলার; সকাল ৯টার সময় তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৭৬ ডলার।
এই দুই তেলের দাম ছয় সপ্তাহ ধরে একটানা বাড়ছে; ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম একটানা এত দিন ধরে তেলের দাম বাড়ছে।
বেশ কিছু কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এর মধ্যে অন্যতম হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমে আসবে, বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে এমন প্রত্যাশা তৈরি হওয়া। সেই সঙ্গে আছে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ চীনে চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব জানায়, তারা যে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এমনকি সেপ্টেম্বরের পরও এই উৎপাদন কর্তন চলতে পারে, তবে বিষয়টি নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব দিনে ৯০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে।
একই দিনে রাশিয়া জানায়, সেপ্টেম্বরে তেল রপ্তানি দিনে তিন লাখ ব্যারেল কমানো হবে। এদিকে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজটি ছিল কৃষ্ণসাগরের নভোরোসিস্ক বন্দরে। বৈশ্বিক তেল সরবরাহের ২ শতাংশ হয় এই বন্দর দিয়ে। তবে হামলার পর এই বন্দরের কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব যে তেল উৎপাদন হ্রাসের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছে, বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে তেলের মজুত কমার কারণেও অপরিশোধিত তেলের বাজারের সূচক সম্প্রতি শক্তিশালী হয়েছে। উৎপাদন হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরামকো এশিয়ার জন্য তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এ নিয়ে টানা তিন মাস তারা এই দর বৃদ্ধি করল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং এক নোটে বলেছেন, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত, চীনের অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের পালে হাওয়া লাগা—এসব কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। তবে মধ্য এপ্রিলে দাম যেখানে উঠেছিল, এরপর দাম আর সেভাবে বাড়ছে না, বরং তার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা চীনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতিতে জ্বালানির চাহিদা কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই তাদের আগ্রহের জায়গা।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল উত্তোলন কেন্দ্রের সংখ্যা গত সপ্তাহে আরও চারটি কমেছে, ২০২২ সালের মার্চের পর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।