ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই গত মে মাসে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি অস্থায়ী বাজারে ফিলিস্তিনিরা কেনাকাটা করছে।
ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই গত মে মাসে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি অস্থায়ী বাজারে ফিলিস্তিনিরা কেনাকাটা করছে।

গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ এখন কর্মহীন, বেকারত্ব বাড়ছেই

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ শুরু হয় গত অক্টোবর মাসে। ইসরায়েলের টানা হামলার মধ্যে উপত্যকাটির বহু অধিবাসী চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন। এতে সেখানে বেকারত্বের হারও ক্রমে বাড়ছে। গত আট মাসে গাজায় বেকারত্বের হার বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ এখন কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার।

ফিলিস্তিনের কর্মসংস্থানের ওপরে যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক এক মূল্যায়নে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। শুধু গাজা নয়, পুরো ফিলিস্তিনেই বেকারত্বের হার বেড়েছে। আইএলও জানায়, গাজায় এখন বেকারত্বের হার ৭৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং পশ্চিম তীরে এই হার প্রায় ৩২ শতাংশ। সম্মিলিতভাবে ওই অঞ্চলে গড় বেকারত্বের হার এখন ৫০ শতাংশের বেশি।

আইএলওর আরব অঞ্চলের পরিচালক রুবা জারাদাত বলেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁরা ইতিমধ্যে চাকরি খোঁজা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের বাদ দিয়েই এ হিসাব করা হয়েছে। প্রকৃত বেকারত্বের পরিস্থিতি অনেক খারাপ।

গাজায় ইসরায়েলের স্থল ও বিমান অভিযান শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর। এর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭ হাজার ৩৩৭ জন অধিবাসী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ। বিপরীতে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জনে। এ ছাড়া কয়েক ডজন ইসরায়েলি নাগরিক এখনো গাজায় বন্দী রয়েছেন।

চলমান গাজা যুদ্ধ শুরুর আগেও উপত্যকাটির মোট ২৩ লাখ লোকের মধ্যে প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। গত আট মাসের যুদ্ধে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে।

আইএলওর আরব অঞ্চলের পরিচালক রুবা জারাদাত বলেন, একবার চিন্তা করে দেখুন, কী পরিমাণ মানুষ গাজায় বেকার অবস্থায় রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ও পরিবারের জন্য সামান্য খাদ্যও নিশ্চিত করতে পারছেন না। আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় গাজা ও পশ্চিম তীরের অনেক পরিবার গুরুতর দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে এটি তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলছে। এমনকি তাঁদের কাছে অর্থ থাকলেও চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতাল নেই।

আইএলওর তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৩৩ শতাংশ কমেছে। গাজা উপত্যকায় এই হার ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পশ্চিম তীরে তা ২২ দশমিক ৭ শতাংশ সংকোচন হয়েছে।
পশ্চিম তীরের রামাল্লার কেন্দ্রস্থলে একটি ক্যাফের মালিক মোহাম্মদ হামদান। তিনি জানান, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা দোকানের ভাড়া পরিশোধ করতে পারিনি। আমাদের পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছে অনেক ঋণ হয়ে আছে।’ হামদান বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি যে আমার ব্যবসাই হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।’

আইএলও জানায়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অনেক ফিলিস্তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। যুদ্ধের আগে পশ্চিম তীরের জনশক্তির ২২ শতাংশ ছিলেন এমন শ্রমিক। তাঁরা ইসরায়েলে কাজ করে পশ্চিম তীরে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ নিয়ে আসতেন। তবে ইসরায়েল এখন তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক এখন ইসরায়েলে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন।

ফিলিস্তিনের আয়ের উৎস কমার আরেকটি বড় কারণ রয়েছে। পশ্চিম তীরে সীমিত পরিসরে স্বায়ত্তশাসন চালাতে পারে প্যালেস্টাইন অথরিটি বা পিএ। বিভিন্ন চুক্তির অধীন পিএর পক্ষে সেখান থেকে কিছু কর ও শুল্ক আদায় করে ইসরায়েল। এই অর্থ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বাজেট, সরকারি পরিষেবার অর্থায়ন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যয় হয়। যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল রাজস্ব আদায়ের এ ধরনের তহবিলগুলো আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখন কর্মচারীদের সম্পূর্ণ বেতন দিতে পারছে না, যা প্রকারান্তরে সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে।

অর্থনীতিবিদ হিন্দ বাট্টা আল-জাজিরাকে বলেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি সম্পদ ও ভূমি নিয়ন্ত্রণ করে ফিলিস্তিনি অর্থনীতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে চলেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিন এখন একটি দুর্বল অর্থনীতির অঞ্চল এবং ইসরায়েলের ওপরে নির্ভরশীল। উপরন্তু চলমান সংকট মোকাবিলায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে কমিয়ে দিতে রাজস্বের অর্থ আটকে দিয়েছে ইসরায়েল।