১ লাখ কোটি ডলারের জিডিপি অর্জন করতে স্বাধীনতার পর ভারতের ৫৮ বছর লেগেছে, এরপর ১২ বছর লেগেছে ২ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হতে, তারপর ৩ লাখ কোটি ডলারের জিডিপি হতে লেগেছে মাত্র ৫ বছর।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল-গ্যাসে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু অনেক দেশ সেই নিষেধাজ্ঞায় কর্ণপাত না করে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা অব্যাহত রাখে। তাদের মধ্যে ভারত অন্যতম। ফলে এই যুদ্ধের কারণে ভূরাজনীতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারত।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক কলামে এসব কথা বলেছেন জনপ্রিয় লেখক রজার কোহেন। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি। জয়শঙ্কর রাশিয়ার তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের চেয়ে ছয় গুণ বেশি তেল কিনেছে।
যেসব দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৬০ হাজার ডলার, তারা যদি নিজের স্বার্থে রাশিয়ার তেল কিনতে পারে; তাহলে ২ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে ভারত এই নিষেধাজ্ঞা মেনে বিপদে পড়বে, এটা আশা করা ঠিক নয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যেখানে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা কমিয়ে দিয়ে বিপদে পড়েছে, মূল্যস্ফীতি যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে; সেখানে ভারত এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েনি। জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
এতে সেই সব দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। গত বছর ভারতীয় রুপিরও দরপতন হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে বিপুল তেল কেনার কারণে ভারতের আমদানি ব্যয় অতটা বাড়েনি। তাদের রিজার্ভ কমলেও বড় ধরনের সংকট হয়নি। এই বাস্তবতায় বড় বড় বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলো মন্দার কবলে পড়বে, এমন আশঙ্কা থাকলেও ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি।
ভারতের বিভিন্ন শহর চষে বেরিয়েছেন লেখক রজার কোহেন। তাঁর মতে, ভারতের অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। কিছু তথ্যও দিয়েছেন তিনি। যেমন আইফোন নির্মাতা কোম্পানি ফক্সকন ভারতে দ্রুতহারে উৎপাদন বাড়াচ্ছে। চীনে লকডাউন ও শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে দেশটিতে আইফোন উৎপাদন কমেছে। সে কারণে ভারতে উৎপাদন বাড়ছে। এমনকি ফক্সকন ৬০ হাজার শ্রমিকের আবাসনের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করছে।
বিষয়টি হচ্ছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এবং তারপর কোভিডের কারণে বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো এখন আর একটি উৎসের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না। চীন থেকে কারখানা সরিয়ে আনছে তারা। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে ভিয়েতনাম। তবে ভারতেও অনেক কারখানা আসছে। সম্প্রতি দেশটিতে সেমিকন্ডাক্টর কারখানাও তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ভারত সফরে এসে বলেন, ‘যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহব্যবস্থার পথে ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত হুমকি তৈরি করছে, আমরা তাদের কবল থেকে বের হতে চাই।’ তখন তিনি ভারতকে বিশ্বস্ত বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আখ্যা দেন। তবে নিশ্চিতভাবেই ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে তারা বরং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একধরনের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন রজার।
এদিকে সম্প্রতি এক বক্তৃতায় ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানি বলেন, ভারতের প্রকৃত প্রবৃদ্ধির কাল কেবল শুরু হচ্ছে। তিনি আগামী ২৫ বছরের ভারতের চিত্র আঁকেন এভাবে—এই সময়ের মধ্য ভারত শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত হবে।
আর ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের মধ্যবয়সীদের গড় বয়স হবে ৩৮ বছর। তখন ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যবিত্ত শ্রেণির বসবাস হবে ভারতে। ফলে দেশের ভেতরেই বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে ভারতের। সেই সঙ্গে আছে পরিবর্তিত ভূরাজনীতির সুবিধা।
বাস্তবতা হচ্ছে, দ্রুত উত্থান হচ্ছে ভারতের অর্থনীতির। ১ লাখ কোটি ডলারের জিডিপি অর্জন করতে স্বাধীনতার পর ভারতের ৫৮ বছর লেগেছে, এরপর ১২ বছর লেগেছে ২ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হতে, তবে সেখান থেকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি হতে লেগেছে মাত্র ৫ বছর। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে।