বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে, এমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্টদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না। দেশটি জানিয়েছে, তেল উত্তোলন বাড়ানোর সেই পরিকল্পনা তারা বাদ দিয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী রাখতে গত বছর থেকে আগ্রাসীভাবে তেলের উৎপাদন কমিয়েছে সৌদি আরব ও ওপেকের সদস্য বিভিন্ন দেশ। কথা ছিল, চলতি বছর তারা অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। কিন্তু সৌদি আরব সরকার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোকে দেওয়া এক নির্দেশে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
২০২৭ সালের মধ্যে সৌদি আরামকোর দৈনিক উৎপাদন ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার কারণে জ্বালানির বাজারে আবার একধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে বলে গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আইইএ বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছর তেলের চাহিদা কমবে। সেই সঙ্গে চলতি দশকের মধ্যভাগে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠবে। সে কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা আর তেমন একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণা বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। বাইডেন আশা করেছিলেন, সৌদি আরব তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করলে দাম কিছুটা কমবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের লড়াইয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের সংকট চলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্বালানি তেলের দাম এখন প্রতি ব্যারেল ৮১ ডলার, ২০২৩ সালের গড় দামের চেয়ে যা সামান্য কম। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের একের পর এক হামলার পরও জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব ও ওপেক জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
সৌদি আরব গত বছর দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ এটা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। তবে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল। এর আগে দেশটির সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দাবি করেছিলেন, সৌদি আরব দিনে দুই কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সৌদি আরবের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে যে সমস্যা আছে, সেটা তারা বুঝতে শুরু করেছে। তাঁরা আরও বলেছেন, এখন তাদের কৌশল নিয়ে বড় ধরনের চিন্তাভাবনা করতে হবে। এর ফলে আরামকোর পুঁজি ব্যয়ে এর বড় প্রভাব পড়বে, সেই সঙ্গে উপসাগরের সরবরাহব্যবস্থা এবং ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেলনীতিতেও তার প্রভাব অনুভূত হবে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপে যখন বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার ধসে যেতে বসেছিল, ঠিক তখন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তেলশিল্পের সম্প্রসারণে কয়েক শ কোটি ডলারের প্রকল্প হাতে নেন।