চীনের অর্থনীতি গতি হারিয়েছে। অনেক চেষ্টাচরিত্র করেও দেশটির কমিউনিস্ট সরকার অর্থনীতিতে গতি আনতে পারছে না। এর মধ্যে জানা গেল, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিীয় অর্থাৎ এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
১৯৯৮ সাল থেকে বিদেশি বিনিয়োগের রেকর্ড সংরক্ষণ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন হলো যে বিদেশিরা যত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, তার চেয়ে বেশি অর্থ তুলে নিলেন। বছরের প্রথম অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে চীনে ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল।
মূলত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের এক পূর্বাভাসের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বছরের প্রথম ভাগে চীনের জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে। ওপেক মনে করছে, বছরের বাকি সময়েও চীনের জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে না। অর্থাৎ অর্থনীতিতে গতি আসার সম্ভাবনা নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশিবিনিয়োগকারীরাও চীনে বিনিয়োগ করা সমীচীন মনে করছেন না।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের কারণে যদি চীনের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়, তাহলে তার প্রভাব অন্য দেশেও পড়তে পারে। বিশেষ করে তেল রপ্তানি করা দেশগুলোর ওপর।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে সৌদি আরবের মতো তেল রপ্তানিকারক দেশ তেল উৎপাদন কমিয়েছে। তেলের রপ্তানি কমলে পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশের রাজস্ব আয় কমতে পারে। ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচতে আগেভাগেই এসব দেশ তেল উৎপাদন হ্রাস করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে কথা বলার সময় চীন–বিষয়ক অর্থনীতিবিদ ডানকান রিগলি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মূলত চীনে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে বা মুনাফা বের করে ব্যবসা গোটাচ্ছেন।
ডানকান রিগলির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেই বিনিয়োগকারীরা বেইজিং থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পশ্চিমা বিশ্বের সংস্থাগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলে ঝুঁকি কমাতে ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতে কার্যালয় ও ব্যবসা খুলছে।
মূলত কোভিড মহামারির পর থেকেই চীনের অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলে। চীনের ধনীরা দেশও ছাড়ছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ২ হাজার ৭০০ শতকোটিপতির মধ্যে ৬০০ জনেরও বেশি ছিলেন চীনের বাসিন্দা। কিন্তু গত বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬২–তে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেই দেশ ছাড়ছেন চীনের ধনীরা। সঙ্গে অর্থও নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ্যে এল।