চীন
চীন

খারাপ সময় শেষের ইঙ্গিত চীনে, টানা তিন মাস বেড়েছে শিল্প মুনাফা

চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা অক্টোবরে তৃতীয় মাসের মতো বেড়েছে। এই পরিসংখ্যানে বোঝা যাচ্ছে, চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, অর্থাৎ অর্থনীতির গতি বাড়াতে চীন সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেগুলো কাজে আসতে শুরু করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, অক্টোবরে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বরে মুনাফা বেড়েছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ ও আগস্টে বিস্ময়করভাবে বেড়েছিল ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।

গত তিন মাসে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বাড়লেও বছরের প্রথম ১০ মাসের হিসাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমেছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বছরের প্রথম ৯ মাসে এই মুনাফা হ্রাসের হার ছিল ৯ শতাংশ। সেই হিসাবে মুনাফা হ্রাসের হার অক্টোবরে এসে কিছুটা শ্লথ হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এখনো কোভিড মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ২০২২ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত দেশটিতে সময়-সময় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাঠামোগত কারণেও চীনের অর্থনীতি গতি পাচ্ছে না। দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে, কিন্তু সেই আবাসন খাত ঋণের সংকটে পড়ে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকারের ঋণ লাগামছাড়া। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেও চীনের রপ্তানি খাত মার খাচ্ছে।

চীন সরকার এসব মোকাবিলায় বেশ কিছু নীতিগত ব্যবস্থা নিলেও অর্থনীতিতে তার প্রভাব খুবই সামান্য। সে জন্য সরকারের ওপর প্রণোদনা বৃদ্ধির চাপ কেবল বাড়ছেই।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সু তিয়ানচেন রয়টার্সকে বলেন, টানা তিন মাস মুনাফা বৃদ্ধির কারণে এটা বোঝা যাচ্ছে যে চীনের খারাপ সময় শেষ হয়েছে। এত দিন উচ্চ ব্যয় ও কম চাহিদার কারণে দেশটির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা কমেছে।

সু তিয়ানচেন আরও বলেন, খারাপ সময় অতিবাহিত হলেও এভাবে যে মুনাফার হ্রাস–বৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে বোঝা যায়, উৎপাদন ব্যয়ের ওপর মুনাফা নির্ভর করছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও আছে।

অক্টোবরে চীনের শিল্পোৎপাদন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল। যদিও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বাড়লেও পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক রূপান্তরে সময় লাগবে।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এক বক্তৃতায় বলেছেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা। দেশটিতে বিনিয়োগভিত্তিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে, সে জন্য কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

বছরের প্রথম ১০ মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় ফার্মগুলোর লোকসান হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বিদেশি ফার্মগুলোর লোকসান হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ ও বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোর লোকসান হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

চীন সরকারের এই পরিসংখ্যানে যেসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রাজস্ব অন্তত বার্ষিক দুই কোটি ইউয়ান বা ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার, তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।