এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ছেই। চলতি বছরেই এসব কোম্পানির এআই বিনিয়োগ ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে; এই বিনিয়োগের পরিমাণ ইতিমধ্যে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরা অবশ্য এআইয়ের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কিছুটা সন্দিহান। তাঁদের মনে শঙ্কা, এত বিনিয়োগ থেকে যে পরিমাণ লভ্যাংশ উঠে আসার কথা, তা আসবে কি না।
মেটা, অ্যালফাবেট ও আমাজনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের প্রথম ছয় মাসে এআই বাবদ বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাঁদের তথ্যানুসারে, এই বিনিয়োগের পরিমাণ ১০৬ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ওয়াল স্ট্রিটের শঙ্কা সত্ত্বেও এই কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, আগামী ১৮ মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ গত সপ্তাহে বলেছেন, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সময়ের আগেই সক্ষমতা তৈরি করতে হবে; বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই তা করতে হবে। তাঁর পূর্বাভাস, চলতি বছর এআই বাবদ মেটার মূলধনী ব্যয় ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের উন্নীত হতে পারে।
এই কোম্পানিগুলোর সামগ্রিক পূর্বাভাস, চলতি বছর বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এআই বাবদ বিনিয়োগ দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরে এআইয়ের অবকাঠামো, যেমন ডেটা সেন্টার বাবদ বিনিয়োগ এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের উন্নীত হতে পারে। যদিও বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর ভাষ্যের সঙ্গে ঠিক একমত নন যে তাদের ক্রেতারা এআইভিত্তিক পণ্য ও সেবায় বড় অঙ্কের ব্যয় করতে আগ্রহী। ফলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের বলছে, ‘আমাদের ওপর আস্থা রাখুন।’ কিন্তু এআই বাবদ যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা তাতে ঠিক স্বস্তি পাচ্ছেন না যে এই অর্থ উঠে আসবে।
এই বিনিয়োগের পরিকল্পনা এমন সময় প্রকাশ করা হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের সামগ্রিক মনোভাব খুব একটা ইতিবাচক নয়। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমতির দিকে। সে কারণে গতকাল শুক্রবার নাসডাকে সংশোধন করা হয়েছে; এর মূল কারণ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন। বিনিয়োগকারীরা বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ–পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দিহান থাকায় এনভিডিয়ার মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে অনেকটা ওঠানামা করেছে।
এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম এতটাই ওঠানামা করছে যে শেষ তিন অধিবেশনে এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ২০০ বিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এআইয়ের দৌড়ে তেমন একটা না থাকলেও গতকাল শুক্রবার এই কোম্পানির বাজার মূলধন এক চতুর্থাংশের বেশি কমেছে। এর পেছনে অবশ্য ভিন্ন কারণ আছে। সেটা হলো কোম্পানিটি সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
মার্ক জাকারবার্গের হিসাব, পরবর্তী ভাষা মডেল প্রশিক্ষিত করতে আগের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ কম্পিউটিং সক্ষমতা প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট তৈরিতে কম্পিউটিং সক্ষমতা অনেকটা বাড়াতে হবে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এআইতে যে বিনিয়োগ করছে, তার বড় অংশ যাচ্ছে জমি কেনা ও নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণে। তারা এখন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যবসা করছে; সে জন্য বিশাল বিশাল ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন হচ্ছে। এই প্রযুক্তির উত্থানে শক্তি জোগাচ্ছে চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া। চ্যাটবট তৈরিতে যে বিশাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার তৈরিতেও বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হচ্ছে।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মপ্রক্রিয়ার অটোমেশন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে এআই ব্যবহার করছে। সে জন্য ক্লাউড সেবার চাহিদা বাড়ছে। যদিও এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে এখনো ফল আসা শুরু হয়নি। ওপেন এআই, অ্যান্থ্রোপিক, এক্সএআই, মিস্ট্রাল—এই কোম্পানিগুলো আরও উন্নত ভাষা মডেল তৈরিতে সীমিত সম্পদ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এআইতে বিপুল বিনিয়োগের ফলে যা হচ্ছে তা হলো, এই খাতে বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে এই ছাঁটাই শুরু হয়। কোভিড মহামারির সময় প্রযুক্তির বাড়তি চাহিদা মেটাতে কোম্পানিগুলো বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। তখন চাহিদা কমে আসায় ছাঁটাই শুরু হয়। এর পরের ধাপে ২০২৩ সাল থেকে যে ছাঁটাই শুরু হয়, তার মূল কারণ এআইতে বিনিয়োগ। চ্যাটজিপিটি আসার পর বোঝা যায়, এআই কী করতে পারে। ফলে সবাই এখন এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে।
সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, বিবিসি