বোয়িং
বোয়িং

এবার বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক সমস্যা ধামচাপার অভিযোগ

বোয়িংয়ের এক বিমানে বৈদ্যুতিক সমস্যা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। যে বিমানে এই সমস্যা ছিল, ২০১৯ সালে সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

দ্য ফাউন্ডেশন ফর এভিয়ান সেফটির দাবি, ২০১৯ সালে ইথিওপিয়া এয়ারলাইনসের যে বোয়িং উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেটিতে বৈদ্যুতিক সমস্যাসহ আরও কিছু সমস্যা ছিল। যেমন এই বিমান যখন নিচের দিকে নেমে আসত, তখন হঠাৎ একদিকে কাত হয়ে যেত। কিন্তু এসব সমস্যা লুকানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।

বিবিসি জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, এখন বোয়িংয়ের যত বিমান আকাশে উড়ছে, তার মধ্যে ১০০০-এর বেশি বিমানে বৈদ্যুতিক সমস্যা আছে। মূলত উৎপাদন ত্রুটির কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ।

২০১৯ সালে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মূলত সেই বিমানের সূত্রে সংগঠনটি এসব অভিযোগ তুলেছে।

বোয়িংয়ের এই বিমানটি ছিল ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের। ওই সময় এটি ছিল একেবারেই নতুন। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় দুর্ঘটনার পর এই মডেলের দ্বিতীয় বিমান হিসেবে তা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এভিয়ান সেফটি বলেছে, এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তদন্তকারী সংস্থার কাছে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে।

বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতা। সেন্সরের সমস্যার কারণে ভুল সময়ে তা সক্রিয় হয়। এভিয়ান সেফটি ফাউন্ডেশন নিজেদের ওয়েবসাইটে বেশ কিছু নথিপত্র প্রকাশ করেছে। ইথিওপিয়ার যে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, এসব নথি সেই বিমানের নির্মাণসংক্রান্ত। বোয়িংয়ের এক কর্মী এসব নথি ফাঁস করেছেন।

এসব নথি অবশ্য একেবারেই কারিগরি। তবে বিমান তৈরির সময় যে গলদ হয়েছিল, এই নথিতে তা বোঝা যায়। কারখানায় ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমান তৈরির সময় যে জটিল ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ ছিল, এসব নথিতে তার চিত্র পাওয়া যায়।

এভিয়ান সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, এসব নথি থেকে বোঝা যায়, এই মডেলের বিমান তৈরির সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল। এমনকি বৈদ্যুতিক তার পর্যন্ত ঠিকঠাক স্থাপন করা হয়নি এবং তারের অভাব ছিল। এসব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ নিয়ে কাজ করতে কর্মীদের কীভাবে অত্যন্ত চাপের মুখে রাখা হয়েছে, সে বিষয়টিও এখানে উঠে এসেছে।

ফাউন্ডেশনের অভিযোগ, ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের বৈদ্যুতিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল; বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে এসব বিষয়ের যোগ ছিল। কিন্তু এসব বিষয় সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিমান পরিবহন সংস্থা ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে লুকানো হয়েছে।

বোয়িংয়ের কারখানায় উৎপাদন পর্যায়ে সমস্যা থেকেই গেছে। এসব কারণে চলতি বছরের শুরুতে আলাস্কা এয়ারলাইনসের বিমানের একটি দরজা খুলে পড়ে যায়।

ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এড পিয়ারসন ওয়াশিংটনের রেন্টনে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান কারখানার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এই মডেলের দুটি বিমান দুর্ঘটনার পর তিনি বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের শুনানিতে অংশ নেন।

ইথিওপিয়ার সরকারি তদন্তেও এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মাণত্রুটির কারণে বিমানের সেন্সর ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করছিল না। ফলে একপর্যায়ে বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড এই ভাষ্য অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, সেন্সর কাজ না করার কারণ সম্ভবত বাইরের কোনো বস্তু, সম্ভবত পাখি।

বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমান প্রত্যয়নের সময় বোয়িং কর্তৃপক্ষ ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। ২০১৭ সালে এই মডেলের বিমান আকাশে ওড়ে। এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটি দুর্ঘটনা হয়। সেখানে বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল এবং বোয়িং ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জালিয়াতি করেছিল।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও বোয়িং অপরাধের অভিযোগ ফয়সালা করার বিষয়ে একমত হয়। সেই সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বোয়িংকে তিন বছর সময় দেওয়া হয়; এই সময়ের মধ্যে তারা বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। কিন্তু সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই চলতি বছরের শুরুতে আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের প্যানেল খুলে পড়ে। এরপর আবার বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

যদিও বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেলি ওর্টবার্গ বলেছেন, গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কোম্পানি যথাসাধ্য সব করবে।