ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও আগামী কয়েক মাসে সুদহার কমানোর গতি কমতে পারে।
পাওয়েল বলেন, অর্থনীতি স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তিনি এ কথা বলেছেন; এসব ক্ষেত্রে এখনো উচ্চ সুদহারের প্রভাব আছে। উচ্চ সুদের হার ধরে রাখা হলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। খবর সিএনএন
ডালাসে এক অনুষ্ঠানে পাওয়েল বলেন, ধীরে ধীরে আরও নিরপেক্ষভাবে নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে তাড়াহুড়ো করে সুদহার কমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে না। পাওয়েলের এই বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটে।
অর্থনীতিবিদেরা একমত, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতি বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে আগামী বছর অর্থনীতিতে দ্রুত বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা কম। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় যা আছে সেগুলো হলো ২০১৭ সালের করছাড় দীর্ঘায়িত করা, বিভিন্ন ধরনের করছাড় প্রদান, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ করা ও বিপুল হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা। নতুন রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের মাধ্যমে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আছে।
জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ফেডের অর্থনীতিবিদেরা আগামী মাস থেকেই ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং অর্থনীতিতে তার সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে, তার মূল্যায়ন শুরু করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের নীতির সম্ভাব্য প্রভাব আরও বিশদভাবে খতিয়ে দেখার পর পর নীতিনির্ধারকেরা সেগুলো বিবেচনায় নেবেন। অনেক কিছু এখনো অনিশ্চিত, যেমন অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা।
জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘আমরা সঠিক তথ্য জানার আগে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাই না; আমি অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না।’
ফেডের চেয়ারম্যান হিসেবে পাওয়েলের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের মে মাসে। তবে ফেডের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য হিসেবে তাঁর মেয়াদ ২০২৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফেডে থাকবেন কি না, তখন তিনি শুধু এটি নিশ্চিত করেছেন যে চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে চান।
এদিকে অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্যে আগের মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। আবার মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে, এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। ফেড কর্মকর্তারা মনে করছেন, অক্টোবরের তথ্যে নতুন প্রবণতার ইঙ্গিত আছে কি না, তা মূল্যায়নে আরও সময় প্রয়োজন।
অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার প্রকাশিত উৎপাদক মূল্য সূচক অক্টোবর মাসেও উচ্চ হারে বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে উৎপাদন পর্যায়ে পণ্যের খরচ বাড়ছে; ভবিষ্যতে ভোক্তা পর্যায়েও তার প্রভাব পড়তে পারে।
তবে বর্তমানে অর্থনীতিবিদ ও ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে, যদিও মাঝে মাঝে কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে।
পাওয়েল বলেছেন, ‘শ্রমবাজারের অবস্থা মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ; মূল্যস্ফীতি বিষয়ক প্রত্যাশাও স্থিতিশীল। আশা করি, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নেমে আসবে, যদিও সেই যাত্রা একেবারে মসৃণ না–ও হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন হয়ে গড়েছে। ক্ষমতায় আসছেন ডেনাল্ড ট্রাম্প। মূল্যস্ফীতি নিয়েও এখন আর তেমন আলোচনা নেই। যদি আরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির খবর আসে, ফেডের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব পড়তে পারে। একই সময়ে কর্মকর্তারা মার্কিন শ্রমবাজারের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়া এবং বেকারত্ব সামান্য বৃদ্ধির কারণে সেপ্টেম্বরে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বলা হয়, ধাপে ধাপে তা আরও কমানো হবে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া ফেড এবং সংস্থাটির চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় মূল্যস্ফীতি আবার বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। ফলে ফেড কেবল সুদের হার কমানো বন্ধ করতে নয় বরং মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়লে আবার সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিতে পারে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার চূড়ান্ত প্রভাব বোঝা সময়সাপেক্ষ।
এই পরিস্থিতিতে ঋণের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর অর্থ হলো ক্রেডিট কার্ড ও বন্ধকের সুদের হার মার্কিন ভোক্তাদের জন্য চাপের কারণ হবে। যদি ট্রাম্পের নীতিতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষকে আবারও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সইতে হবে।
২০১৭ সালে ট্রাম্প জেরোম পাওয়েলকে ফেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে ফেডের স্বাধীনতা রক্ষায় পাওয়েলের প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের বিরক্তির কারণ হয়েছে। ট্রাম্প চান, ফেডের নীতি প্রণয়নে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা থাকুক। যদিও পাওয়েল বলে দিয়েছেন, ফেডের সিদ্ধান্ত কেবল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে হবে, কোনো রাজনৈতিক প্রভাবে নয়।
পাওয়েল ফেডের বিশ্বাসযোগ্যতায় জোর দিয়ে বলেন, ভোক্তাদের মূল্যস্ফীতি–সংক্রান্ত প্রত্যাশা এই বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতিফলন।
ফেড গভর্নর অ্যাড্রিয়ানা কুগলার সম্প্রতি এক বক্তৃতায় ফেডের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণার উদাহরণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায় ফেডের স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।