হামাস ও ইসরায়েলের সশস্ত্র সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আর্থিক খাতের কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে নিরাশার সুর শোনা গেছে। সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ শীর্ষক সম্মেলনে তাঁরা বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রতিবছর সৌদি আরবে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সৌদি আরবের বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে আসেন। সৌদি আরব তেলভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। দেশটির সরকারের হাতে ৭৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম তহবিল আছে, তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলো।
বিশ্বের আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্তারা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বলে এটি ‘দাভোস ইন দ্য ডেজার্ট’ হিসেবে খ্যাত।
সম্মেলনে অংশ নিয়ে জে পি মর্গ্যান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমি ডিমন সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কোন্নয়নের যে চেষ্টা চলছে, তারা যেন সেটা ত্যাগ না করে।
জেমি ডিমন বলেন, ‘ইসরায়েলে যা–ই ঘটুক না কেন, আমার আহ্বান, সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা আপনারা অব্যাহত রাখবেন।’
এদিকে সৌদি সরকারের সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছিল, তা আপাতত স্থগিত করেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশটি পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেছেন, সামগ্রিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
অজয় বাঙ্গা আরও বলেন, বিশ্ব ও ভূরাজনীতিতে যা চলছে, বিশেষ করে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে যা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো যদি দিন শেষে সব একত্র করা হয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তার আরও গুরুতর প্রভাব অনুভূত হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা অবশ্য ইসরায়েল-হামাস সংকট নিয়ে খুব কমই কথা বলেছেন; বরং তাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব ও রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা নিয়ে বেশি কথা বলেছেন।
মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানি ব্ল্যাকরকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরেন্স ফিঙ্ক বলেছেন, এসব সমস্যার সমাধান না হলে যে বিশ্বে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সেটা হলে বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়ে যাবে, সমাজ আরও ভীতিকর হবে আর পরিণামে অর্থনৈতিক সংকোচন হবে।
হেজফান্ড ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিও হতাশার কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, এখন বিশ্বে যে মুদ্রানীতি চলছে এবং ভবিষ্যতে যা গ্রহণ করা হবে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তার বড় প্রভাব পড়বে। বিশ্বে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে এবং সৌদি আরব যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা ভাবছিল, তা ব্যাহত পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্য চুক্তি করতে তিনি দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে কাজ করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ একসময় তাদের শত্রু ছিল, তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে সৌদি আরব পুবের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করবে বলে জানিয়েছে।
এবারের সম্মেলনে পাঁচ হাজার অতিথি অংশগ্রহণ করেন।