গুগল যে কারণে এবার আদালতে সরকারের মুখোমুখি হচ্ছে

গুগল
রয়টার্স

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখোমুখি হচ্ছে গুগল। সরকারের অভিযোগ, ইন্টারনেটে সার্চ বা অনুসন্ধান ব্যবসায় গুগল অ্যান্টি–ট্রাস্ট নীতি বা প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করেছে।

সিএনএন জানিয়েছে, এর ফলে বহুল প্রতীক্ষিত এক আইনি প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গুগলের গতিপ্রকৃতি বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় গুগলের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল আদালতে মামলার শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯০-এর দশকে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা সরকার নিয়েছিল, তারপর এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ ব্যবসায়িক একচেটিয়াতন্ত্রের অভিযোগ।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগ ও কয়েক ডজন রাজ্য অভিযোগ তোলে, অনলাইনে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে গুগল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করেছে। অভিযোগে বলা হয়, তারা বিভিন্ন তারবিহীন সেবাপ্রদানকারী ও স্মার্টফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে গুগলকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহারে বাধ্য করেছে গ্রাহকদের। এরপর এসব অভিযোগ একত্র করে একটি মামলা করা হয়।

গুগল অবশ্য বলেছে, তারা মেধার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং গ্রাহকেরাও তাদের পছন্দ করেন, কারণ তারাই সেরা। এমন নয় যে তারা অবৈধভাবে প্রতিযোগিতা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, গুগলের ২৮৩ বিলিয়ন বা ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের রাজস্ব আয়ের অর্ধেকই আসে সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবসা থেকে। অন্যদিকে মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের ৭৬ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের মুনাফার অর্ধেক আসে এই ব্যবসা থেকে। গুগলের বাজার মূলধন যে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, তার পেছনে সার্চ ইঞ্জিনের প্রভূত অবদান রয়েছে।

মার্কিন সরকারের প্রাথমিক অভিযোগ, গুগল প্রতিবছর শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে অ্যাপল, এলজি, মটোরোলা, স্যামসাংয়ের মতো ফোনে এবং মজিলা ও ফায়ারফক্সের মতো ব্রাউজারে তাদের সার্চ ইঞ্জিনকে ডিফল্ট করে রাখছে।

মার্কিন সরকারের আরও অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেটে যত অনুসন্ধান হয়, তার ৮০ ভাগ হয় গুগলের মাধ্যমে।

শুধু গুগল নয়, অনলাইনের মহিরুহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠেছে। এর আগে ২০২০ সালে অ্যান্টি-ট্রাস্ট (বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতাসংক্রান্ত মার্কিন আইনবিষয়ক) শুনানিতে হাজিরা দিয়েছিলেন অ্যামাজন, ফেসবুক, গুগল ও অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।

সেবার গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই জানিয়েছিলেন গুগল অ্যালফাবেট কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রযুক্তি-দুনিয়ায় শীর্ষে তুলে ধরছে। কিন্তু সার্চ বা অনুসন্ধানে গুগলের একচেটিয়া বাজার কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের জবাবে সুন্দর পিচাই তখন বলেছিলেন, সার্চ ইঞ্জিন তো আরও অনেক আছে, কিন্তু মানুষ গুগলের কাছে আসে তার গুণাগুণের কারণেই।

তবে সুন্দর পিচাই যত ব্যাখ্যাই দিন না কেন, ২০১৭ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিযোগিতাবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে গুগলের জরিমানা হয়েছে।

২০১৭ সালে ইউরোপীয় কমিশন গুগলকে ২৪২ কোটি ইউরো জরিমানা করে। এরপর ২০১৮ সালে ফরাসি প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ গুগলকে ৪৩৪ কোটি ডলার জরিমানা করে। ২০২০ সালে ডাচ প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ গুগলকে জরিমানা করে পাঁচ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০২২ সালে ইতালির প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ ১০৬ কোটি ডলার জরিমানা করে এই কোম্পানিকে। আর ২০২৩ সালে ভারতীয় প্রতিযোগিতা কমিশনের (সিসিআই) করা মামলায় গুগলকে ১৬ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়।

সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ, গুগল অন্যায়ভাবে একচেটিয়া বাজার দখল করছে। অর্থাৎ তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা করেছে, প্রতিযোগীদের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি।
তবে গুগল এসব জরিমানার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে, যেগুলোর রায় এখনো হয়নি।