নভেম্বরে তুরস্কের মূল্যস্ফীতির হার আবার কিছুটা বেড়েছে, তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত কয়েক মাসে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়ানোর যে নীতি বাস্তবায়ন করছে, বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা মনে করছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, নভেম্বরে তুরস্কের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬১ দশমিক ৯৮; আগের মাস অর্থাৎ অক্টোবরে যা ছিল ৬১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টানা ছয় মাস নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছে বলে দেশটির সরকার মনে করছে। ছয় মাস আগে তুরস্কের নীতিসুদ হার ছিল ৮ দশমিক ৫, এখন যা ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় মুদ্রানীতির কমিটির বৈঠকে নীতি সুদহার আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াবে বলে বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।
২০২২ সালের শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চমূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে নীতি সুদহার বাড়ানোকেই মূল হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল তুরস্ক। সবাই যখন নীতি সুদহার বাড়াচ্ছিল, তখন তারা উল্টো সুদহার হ্রাস করেছে। ফলে ২০২২ সালের অক্টোবরে তুরস্কের মূল্যস্ফীতি ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে তুরস্কের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; তার আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক লিয়াম পিচ এএফপিকে বলেছেন, এসব পরিসংখ্যান থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধরে নিচ্ছে যে চাহিদা কমতে শুরু করেছে এবং পরিণামে মূল্যস্ফীতির চাপ ধীরে ধীরে কমবে। লিয়াম পিচ আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হার আরও কমিয়ে আনতে হলে নীতি সুদহার দীর্ঘদিন বাড়তি রাখতে হবে এবং আমরা আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৪ সালে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে।’
এদিকে তুরস্ক যে সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে, তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও চোখে পড়েছে। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের খামখেয়ালি নীতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী তুরস্ক ছেড়ে চলে যান, তবে বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা ফিরছে তার লক্ষণ হলো, আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর সম্প্রতি তুরস্কের সার্বভৌম ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ইতিবাচক’ করেছে। তারা মনে করছে, তুরস্ক সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়টা পেরিয়ে এসেছে, যদিও তা এখনো ৬০ শতাংশের কিছুটা বেশি। তাদের সতর্কবাণী, মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও প্রায় দুই বছর লেগে যাবে।
তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য মনে করছে, স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে এবং আগামী বছরের মে মাস নাগাদ এর হার ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে।