২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম সেরা পর্যটন গন্তব্য হতে কাজ করছে সৌদি আরব। খুব দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশটি। কিন্তু যত দ্রুতই কর্মকাণ্ড চলুক না কেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগোতে হচ্ছে তাদের। আর এই কর্মযজ্ঞে সৌদি আরব খরচ করছে শত শত কোটি মার্কিন ডলার।
সৌদি আরবের এই পরিকল্পনা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। তাতে এখন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। আর সে কারণে এই প্রথমবারের মতো সৌদি আরব স্বীকার করেছে যে বেশ কিছু প্রকল্প নির্দিষ্ট সময় ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করা যাবে না। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশটির অর্থনীতিকে আমূল বদলে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে।
লাক্সারিলঞ্চেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ধীরগতির কারণে অবশ্য দেশটির অর্থমন্ত্রী খুশি। তিনি মনে করেন, কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। এই পটভূমিতে সৌদি আরব ২০২৬ সালের বাজেট কাটছাঁট করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
এই কৌশল মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করবে। অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেননি যে ঠিক কোন কোন প্রকল্পের বাস্তবায়ন এর ফলে পিছিয়ে যাবে। রাজধানী রিয়াদে তিনি বলেছেন, ‘কারখানা গড়ে তোলা ও প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরি করতে আরও বেশি সময়ের দরকার।’
যদিও কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাবে, কিছু প্রকল্প আবার দ্রুত শেষ করা হবে। এগুলো সেসব প্রকল্প, যেগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। যেসব প্রকল্প এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে কিংবা যেসব প্রকল্প সম্পর্কে এখনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি, সেগুলো এর ফলে আরও বেশি সময় পাবে। আল জাদান বলেন, কিছু প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে, আবার কিছু প্রকল্পের জন্য ২০৩০ সালের পর অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ‘ভিশন ২০৩০’ নামে পরিচিত। এর লক্ষ্য হলো, তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। সৌদি আরবের অর্থনীতি জ্বালানি তেলের ওপর বড় রকম নির্ভরশীল। যুবরাজ দেশটিতে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগও আনতে চান।
নতুন যেসব প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে এপিকন, বিনোদনকেন্দ্র উতামো, নিওম লেজা, কিদিয়া, সিরান্না এবং ছয়কোনাবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল হোটেল। মোহাম্মদ আল জাদান জানিয়েছেন, ব্যয়ের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে সৌদি সরকার ইতিমধ্যে ৬ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ ২২ হাজার ৫০০ কোটি রিয়াল বাঁচিয়েছে।
মোহাম্মদ আল জাদান বলেন, ব্যয়ের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা শুধু খরচ কমানোর বিষয় নয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, সবচেয়ে বেশি লাভ পাওয়ার জন্য সম্পদের কার্যকর ব্যবহার।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এরই মধ্যে বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে তাঁর দেশে কী ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। তিনি নতুন কিছু করতে চাইছেন। আর এর মধ্যে অনেক কিছুই রীতিমতো বিস্ময়কর। সৌদি আরবের মানুষকে তিনি নতুন ধারার জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা দিতে চান। তাঁর হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ। পৃথিবীর অন্যতম বড় রাষ্ট্রীয় তহবিল তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, যার আকার ৭৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
নিওম সিটি নামে যে শহর গড়ে তোলা হচ্ছে, তার জন্য খরচ করা হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি ডলার। ধীরে ধীরে এই শহর তার রূপ পাচ্ছে। মোহাম্মদ বিন সালমান দেখিয়েছেন তার স্বপ্নদর্শী পরিকল্পনার মতোই তাঁর কর্মকাণ্ড। এ প্রকল্পের সমালোচকেরা এর বিশালত্ব দেখে অনেক সময় হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন, আবার অনেক সময় হয়ে ওঠেন সন্দেহপ্রবণ। তবে তাতে করে এই বিশাল প্রকল্পের কাজ থেমে থাকছে না।