বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেলের পাকিস্তানে থাকা সম্পদ কেনার কথা ভাবছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো। সৌদি আরব পাকিস্তানকে বিভিন্নভাবে যে সহায়তা করার নীতি গ্রহণ করেছে, তার অংশ হিসেবেই আরামকো এ চিন্তা করছে।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, সম্পদ কেনার বিষয়টি পাকাপোক্ত হলে তা হবে পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে আরামকোর প্রথম পদক্ষেপ। ব্লুমবার্গের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো সতর্কতার সঙ্গে পাকিস্তানে শেলের সম্পদ মূল্যায়ন করছে, বিশেষ করে তাদের নজর শেল পাকিস্তান লিমিটেডের দিকে। শেল পাকিস্তান দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, যার বাজার মূলধন ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
তবে ঠিক কী মূল্যে এই সম্পদ কেনাবেচা হতে পারে, তা জানা না গেলেও বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে সম্পদ ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে আরামকো, তার মূল্য ২০ কোটি ডলার হতে পারে।
তবে এই পরিকল্পনা যে বাস্তবায়িত হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
চলতি বছরের জুনে শেল পাকিস্তান লিমিটেডের এক ঘোষণার সূত্রে এই বিষয়ের সূত্রপাত। তখন মূল প্রতিষ্ঠান শেল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড শেল পাকিস্তান লিমিটেডে থাকা সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
শেলের প্রধান নির্বাহী ওয়ায়েল সাওয়ান শেয়ারহোল্ডারদের বড় অঙ্কের লভ্যাংশ দিতে চান। সেই বৃহত্তর করপোরেট কৌশলের অংশ হিসেবে শেলের এই সিদ্ধান্ত। সেই সঙ্গে যেখানে ভালো ব্যবসা হচ্ছে না, শেল সেখান থেকে পাততাড়িও গোটাতে চায়।
তবে কেবল সৌদি আরামকোই নয়, এই সম্পদ কেনার দৌড়ে আরও কয়েকটি কোম্পানি আছে বলে জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস।
গত জুলাইয়ে পাকিস্তান রিফাইনারি লিমিটেড ও এয়ার লিংক কমিউনিকেশন যৌথভাবে শেল পাকিস্তানের সিংহভাগ শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখায়।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো নয়। অনেক দিন ধরেই দেশটি বিদেশি মুদ্রার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। জিও টিভির সংবাদে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি পাকিস্তান ছেড়ে গেছে। এর আগে ২০২১ সালে খুচরা জ্বালানি বিক্রেতা পুমা এনার্জি পাকিস্তান ছেড়ে যায় এবং চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাক সেবাবিষয়ক স্টার্টআপ ট্রেলা পাকিস্তান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়।
এদিকে সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানকে কীভাবে আরও সাহায্য-সহযোগিতা করা যায়, তার পথ খুঁজে বের করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটা বিনিয়োগের মধ্য দিয়েও হতে পারে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা চলতি বছরের শুরুর দিকে জানায়, সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জামানত হিসেবে যে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার রেখেছে, তা কীভাবে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা যায়, তার পথ খোঁজা হচ্ছে।
এর আগে জুলাই মাসে পাক সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সৌদি আরব ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে একটি তেল পরিশোধনাগার কেন্দ্র নির্মাণে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী চলতি মাসের শুরুর দিকে এ আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।