উচ্চ সুদহার ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে মার্কিন কোম্পানিগুলোতে। স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ নেওয়ার সময় এখন আর নেই। অনেক কোম্পানির পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে গেছে। তাই দেশটিতে দেউলিয়া সুরক্ষার জন্য আবেদন করা কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যত কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে, ২০১০ সালের পর আর কোনো বছরের প্রথম চার মাসে তত হয়নি। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের সূত্রে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন করেছে। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৭০। এপ্রিলে এসে আবেদনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় চলতি বছর দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৩৬টি কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আবেদন করেছে।
২০২৩ সালে অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় ভোক্তা পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বেশি দেউলিয়া হয়েছে। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড—একসময় যাদের অবস্থা খুবই ভালো ছিল।
এ বছরে যেসব বড় কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে, সেগুলো হলো হুইটেকার, ক্লার্ক অ্যান্ড ড্যানিয়েলস, বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড, এলটিএল ম্যানেজমেন্ট এলএলসি, এসবিভি ফাইন্যান্সিযাল গ্রুপ, ডায়মন্ড স্পোর্টস গ্রুপ এলএলসি, আভায়া ইনকরপোরেশন, সার্টা সিমন্স বেডিং এলএলসি, পার্টি সিটি হোল্ডকো ইনকরপোরেশন ইত্যাদি। এসব কোম্পানির দায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
২০২২ সালের মার্চে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায় উঠে যায়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। ১৪ মাসে ১০ বার নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণে সে দেশের সুদহার এখন ৫ থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের সীমায় উঠেছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে সমাজে অর্থের চাহিদা কমেছে। নীতি সুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা গেলেও তার বিনিময়ে অর্থনীতির গতি কমে যায়। কোম্পানিগুলো সে কারণেই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।