ভারতে আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে জটিলতা বাড়ছেই। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই আছে। এবার কংগ্রেসের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটির শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি যে তদন্ত করছিল, তা–ও কার্যত বন্ধ। সেই সঙ্গে মরিশাসের দুটি কোম্পানির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগের পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সেবি। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, তদন্ত নিয়ে এখন খোদ বাজার নিয়ন্ত্রকদেরই অনেক কিছুর জবাব দিতে হবে। সব অভিযোগ তদন্তের কাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সেবির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৮ মাস পার হয়ে গিয়েছে।
এদিকে মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারীর কোম্পানির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, বেআইনিভাবে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনে দাম বাড়ানোর পেছনে এই দুটি কোম্পানির ভূমিকা আছে। একই অভিযোগ হিনডেনবার্গ রিসার্চও করেছিল।
সেবির নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজারে পুঁজি বিনিয়োগের কারণে উপকৃত হলে সে বিষয়ে সেবিকে তথ্য দিতে হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। ঘুরপথে শেয়ারবাজারে বেনামে বিনিয়োগ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই সেবির নতুন এই পদক্ষেপ।
কিন্তু এখানেই হয়েছে বিপদ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারী কোম্পানির কথা বলা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেবির বিদেশি বিনিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে আদানি গোষ্ঠীর টাকা ঘুরপথে তাদেরই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেবি বিদেশি বিনিয়োগসংক্রান্ত নতুন বিধি প্রণয়নের পর তা থেকে ছাড় পেতে সিকিউরিটি বাজারের আপিল ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) কাছে আবেদন জানিয়েছে সেই দুটি কোম্পানি। সে কারণে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নিয়েছে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, মোদানি (মোদি ও আদানি) মহা কেলেঙ্কারিতে মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারী কোম্পানির নাম এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগসংক্রান্ত সেবির নতুন বিধান মান্য করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। তার আগে সেবির নতুন বিদেশি বিনিয়োগ বিধি মানা থেকে রেহাই চেয়ে স্যাটের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। এ রকম বিধান আগে না থাকায় কোম্পানিগুলো তার সুবিধা নিয়েছিল।
সম্প্রতি কংগ্রেস আদানি গোষ্ঠীর বিষয়ে বেশ সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর কারণে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কথা বলেছে তারা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের লক্ষ্যে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার অন্যতম কারণ হিসেবে সেই চুক্তির কথা উল্লেখ করে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে সম্প্রতি কেনিয়ার নাইরোবিতে এক বিমানবন্দর অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী; তা নিয়েও কেনিয়ায় অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে কংগ্রেসের এই গুরুতর অভিযোগ।
এরই মধ্যে চীনে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলেছে আদানি গোষ্ঠী। শেয়ারবাজারকে আদানি এন্টারপ্রাইজেস জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে তাদের অধীন একটি সংস্থার মাধ্যমে চীনের সাংহাইতে আদানি এনার্জি রিসোর্সেস নামে কোম্পানি গঠন করেছে তারা।