ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে চীন সরকারকেও পাল্টা শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো। চীনের সরকারি গণমাধ্যম সূত্রে এ সংবাদ দিয়েছে সিএনএন।
এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে এই আহ্বান জানিয়েছে। সেই বৈঠকে ইউরোপীয় গাড়ি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলোর দাবি, ইউরোপের যেসব গাড়িতে বড় আকারের পেট্রল ইঞ্জিন আছে, সেসব গাড়িতে এই শুল্ক আরোপ করা হোক।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত পোস্ট অনুসারে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে চারটি চীনা ও ছয়টি ইউরোপীয় গাড়ি কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিসিটিভির সেই পোস্টে বলা হয়েছে, চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো বেইজিংকে কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা অবশ্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের মধ্যে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশন গত সপ্তাহে বলেছে, তারা সাময়িকভাবে ধরে নিয়েছে যে চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যদি গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইউরোপীয় কমিশন চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তাদের অভিযোগ, চীনের এসব কোম্পানিতে সরকার ভর্তুকি দেয়, সে কারণে এসব গাড়ির বাজারদর কম। যেসব কোম্পানি ইউরোপের এই তদন্তে সহায়তা করেছে, তাদের ওপর ২১ শতাংশ এবং যারা সহায়তা করেনি, তাদের ওপর ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে।
বর্তমানে ইউরোপের বাজারে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়িতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে।
এদিকে গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিল। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
চীন সরকার ইতিমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার এই পদক্ষেপ সুরক্ষাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। গত মাসে চীন সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ইউরো নিউজের এক সংবাদে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিএমডব্লিউ, ফক্স ওয়াগন ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো জার্মান গাড়ি কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চীনে কারখানা করা হলে সে দেশের সরকার ভর্তুকি দেয়; ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোও সেই সুবিধা পেয়ে আসছে। এর মধ্যে আছে সস্তা জমি, তুলনামূলক শিথিল করনীতি ও অন্যান্য আইনি সুবিধা।
এখন ইউরোপের শুল্কের বিপরীতে চীন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতে পারে, যেমনটি হয়েছিল ট্রাম্পের জমানায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। তখন এমন হতে পারে যে চীন এত দিন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে যেসব সুবিধা দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেবে।