পাকিস্তান সরকার ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্যিক ঋণ পাওয়ার ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়েছে। ১৪ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে (এসবিপি) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন বা ৪৪৩ কোটি ডলার।
গতকাল বৃহস্পতিবার এসবিপির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মূলত রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক ঋণের প্রাপ্তির কারণে। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে দেশটির এক মাসেরও আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। পাকিস্তানে বেশ কয়েক মাস ধরেই এ রকম অবস্থা বিরাজ করছে। অর্থনীতিবিদেরা সাধারণত কোনো দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে সেটাকে মোটামুটি নিরাপদ অবস্থান বলে মনে করেন। সেই হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে পাকিস্তান যে বিপদে, মানে ঝুঁকিতে আছে, তা বোঝা যায়।
পাকিস্তানের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নিট মজুত রয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন বা ৫৫৩ কোটি ডলার, যা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণকৃত বৈদেশিক রিজার্ভের চেয়ে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলার বেশি। যা-ই হোক, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে সম্মিলিতভাবে বর্তমানে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন বা ৯৯৬ কোটি ডলার।
গত সপ্তাহে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না (আইসিবিসি) পাকিস্তানকে ৩০ কোটি ডলারের এই বাণিজ্যিক ঋণ দিয়েছে। আইসিবিসি পাকিস্তানের জন্য মোট ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে।
অব্যাহত আর্থিক সংকট ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পাদনে বিলম্ব হওয়ার কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি সীমিত হয়ে আসছে। সে জন্য ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তানের জরুরি তহবিলের দরকার। দেশটির অর্থনীতি, তথা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৩৫০ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
আইএমএফ ২০১৯ সালে তাদের এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় পাকিস্তানকে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছিল। এর মধ্যে ১১০ কোটি ডলার গত বছরের নভেম্বরে ছাড় করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এই ঋণ পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকার এ বছরের জানুয়ারির শেষ দিক থেকে আবার ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থার পুনরায় আলোচনা করে।
মনে করা হচ্ছে, দেশটি মোটামুটি ঋণ সুরক্ষিত করার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। কারণ, অর্থায়নের ঘাটতি পূরণে দেশটি আইএমএফের কাছে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, যাতে দাতা সংস্থাটির কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। আইএমএফের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে পারলে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও অর্থায়ন পাওয়ার দুয়ার খুলে যাবে। এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। সূত্র: জিও নিউজ