রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ১৫ মাসের মধ্যে এই প্রথম ডলারের বিপরীতে রুবলের মান ৮৯ ছাড়িয়ে যায়। তবে আজ শনিবার রুবলের দর আবার ৮৮-এর ঘরে উঠেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় ১১টা ৫৬ মিনিটে রুবলের মান ১ দশমিক ৮ শতাংশ পড়ে যায়। তখন প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮৯ দশমিক ১৫ ডলারে দাঁড়ায়। এর আগে তা সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৩২ রুবল পর্যন্ত উঠেছিল।
একই সঙ্গে ইউরো ও ইউয়ানের বিপরীতেও রুবলের দরপতন হয়েছে। ইউরোর বিপরীতে রুবলের ১ দশমিক ৮ শতাংশ দরপতনের পর প্রতি ইউরোর মান দাঁড়ায় ৯৬ দশমিক ৭৪ রুবল। ফলে তা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এ ছাড়া ইউয়ানের বিপরীতে তার ১ দশমিক ৪ শতাংশ দরপতন হয়েছে। ফলে প্রতি ইউয়ানের মান দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৩ রুবল, ১৪ মাসের মধ্যে ইউয়ানের বিপরীতে রুবলের সর্বনিম্ন মান।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেলের দাম স্থিতিশীল থাকার পরও রুবলের দরপতন হচ্ছে। তাদের পূর্বাভাস, ডলারের মান শিগগিরই ৯০ রুবলে উঠবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন ধারণা করা হয়েছিল, রুশ মুদ্রা রুবলের দামে বড় ধরনের পতন হবে। কিন্তু রুশ সরকার পুঁজি নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দেশকে রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে রুবলের দর ধরে রেখেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।
এ ছাড়া অর্থনৈতিক কারণেও রুবলের দরপতন হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। মাসের শেষে রাশিয়ার রপ্তানিকারকেরা বিদেশি মুদ্রাকে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত করেন। সেই সময় গত বুধবার শেষ হয়েছে।
ব্যাংক অব রাশিয়ার ডেপুটি গভর্নর আলেক্সেই জাবোৎকিন রয়টার্সকে বলেছেন, রপ্তানি আয় ও ব্যালান্স অব পেমেন্ট কমে যাওয়ার কারণে রুবলের দরপতন হয়েছে। তবে এটা আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি নয় বলেই তিনি মনে করেন।
জাবোৎকিনকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলেছে, চলতি বছর মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনার সময় পরবর্তী পর্ষদ সভায় মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামার বিষয়টি আমলে নেওয়া হবে।
এদিকে জ্বালানি তেলের মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত ব্রেন্ট ক্রুডের দর গতকাল ও আজ কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দর দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৯০ ডলার।
রাশিয়ার স্টক সূচকও নিম্নগামী। গতকাল শুক্রবার ডলারভিত্তিক আরটিএস ইনডেক্সের মান ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৯৮৫ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমে আসে। এ ছাড়া রুবলভিত্তিক এমওইএক্স সূচকের মান শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৭ পয়েন্ট।
এ ছাড়া রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গ্যাজপ্রমের শেয়ারের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। ২০২২ সালের ছয় মাসের জন্য ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার লভ্যাংশ অনুমোদন করেছে গ্যাজপ্রমের শেয়ারহোল্ডাররা, কিন্তু পুরো বছরের লভ্যাংশ এখনই দিতে চায় না পর্ষদ। সে কারণেই শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে।