রাশিয়া–ইউক্রেন

শস্যচুক্তি নবায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তা

আগের মতো এবারও রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। এতে গম সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শস্য উৎপাদনকারী দেশ
এএফপি

ইউক্রেনের বন্দর থেকে বিনা বাধায় শস্য রপ্তানির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ ১৭ জুলাই শেষ হচ্ছে। আগের মতো এবারও রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

এখন নতুন করে ওই চুক্তি না হলে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে গমের সরবরাহ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশে সাধারণ আমিষযুক্ত গমের অন্যতম উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৬০ শতাংশ গম আমদানি হতো। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর উভয় দেশ থেকে গম আমদানি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। কারণ, কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রাখে রাশিয়া।

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি অব্যাহত রাখা দরকার। কারণ, শস্যচুক্তির ফলে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ উপকৃত হয়েছে। এটি অব্যাহত না থাকলে বিশ্বব্যাপী গমের দাম বাড়ত, আর বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ত।
মাহবুবুল আলম, সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার

এ রকম পরিস্থিতিতে গত বছরের ২২ জুলাই কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো থেকে নিরাপদে খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্যচুক্তি হয়। এই চুক্তির পর ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি শুরু হয়। তাতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম কমে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে গম আমদানির শীর্ষ উৎস হিসেবে আবারও উঠে আসে ইউক্রেন।

জানতে চাইলে ইউক্রেন থেকে গম আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, শস্যচুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে গম আমদানি শুরুর পর দেশে এই পণ্যের সংকট কেটে যায়। এখন রাশিয়া চুক্তিতে না ফিরলে বাংলাদেশে গম আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হবে।

তবে রাশিয়া চুক্তিতে না ফিরলে বিকল্প উৎস থেকে আমদানির ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, বিকল্প উৎসের অন্যতম হলো রাশিয়া। আর রাশিয়া থেকে এখন গম আমদানি হচ্ছে। তবে সব ব্যাংক ঋণপত্র খুলছে না। সব ব্যাংক যাতে জরুরি খাদ্যশস্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম মূলত আমদানিনির্ভর। দেশে বছরে গম উৎপাদিত হয় কমবেশি ১১ লাখ টন। স্বাভাবিক সময়ে দেশে গড়ে গম আমদানি হয় ৬৬ লাখ টন। এ দেশে খাদ্যতালিকায় ভাতের পরই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গমের তৈরি উপকরণ।

শস্যচুক্তির বড় সুবিধাভোগী বাংলাদেশ

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছরের ২২ জুলাই রাশিয়া–ইউক্রেনের মধ্যকার প্রথম শস্যচুক্তির মেয়াদ ছিল ১২০ দিন। একই বছরের ১৮ নভেম্বর চুক্তিটির মেয়াদ ১২০ দিন বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ১৭ মার্চ সব পক্ষ সম্মত হলেও রাশিয়া ১২০ দিন মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়নি। পরদিন ১৮ মার্চ রাশিয়া চুক্তির মেয়াদ ৬০ দিন বাড়াতে সম্মত হয়, যা শেষ হচ্ছে ১৭ জুলাই।

জাতিসংঘের যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের গত সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তির পর এ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ৪৫টি দেশে ভুট্টা, গম ও সয়াবিনের বীজ, শর্ষের বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, বার্লি মিলিয়ে ৩ কোটি ২৭ লাখ টন খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে।

ওই চুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানিতে শীর্ষে রয়েছে চীন। বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তবে শুধু গম আমদানির হিসাব করা হলে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। দেশটি থেকে চুক্তির এক বছরে বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি খাত ১০ লাখ ৬৭ হাজার টন গম আমদানি করেছে।

যুদ্ধরত দেশ থেকে গম আমদানি ৫০%

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সদ্যসমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টন গম আমদানি করে। এর মধ্যে ১৩ লাখ টন বা ২৬ শতাংশই আমদানি হয়েছে ইউক্রেন থেকে।

ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়া থেকেও গম আমদানি হচ্ছে। গত অর্থবছরে সেই দেশ থেকে ১১ লাখ ৮৩ হাজার টন গম আমদানি হয়। অর্থাৎ যুদ্ধরত রাশিয়া–ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশের মোট গমের ৫০ শতাংশ আমদানি হয়।

যুদ্ধরত দেশ থেকে আমদানি নির্ভরতার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নরম গম আমদানির বিকল্প উৎস ভারত রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। এ জন্য যুদ্ধরত দেশ দুটির ওপর নির্ভরতা বেশি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি অব্যাহত রাখা দরকার। কারণ শস্যচুক্তির ফলে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ উপকৃত হয়েছে। এটি অব্যাহত না থাকলে বিশ্বব্যাপী গমের দাম বাড়ত, যার প্রভাব পড়ত বাংলাদেশেও। তাই শস্যচুক্তি নবায়ন হয়, সে জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।