আগামী বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে। সেই সঙ্গে কমতে পারে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার। এতে ভোক্তাদের ক্রয় সক্ষমতা বাড়বে; স্বস্তি আসবে তাঁদের জীবনে। বৃহত্তর বৈশ্বিক অর্থনীতিও একই ধারায় চলবে।
আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়বে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ হলেও ২০২৫ সালে তা ৩ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দ্য মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট (এমইআই)।
মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে ভোক্তাদের জীবনে স্বস্তি আসার পাশাপাশি শ্রমবাজারে তার প্রভাব পড়বে। এমইআইয়ের পূর্বাভাস, আগামী বছর ইলেকট্রনিকস, আসবাব, অ্যাপ্লায়েন্সসহ ঐচ্ছিক পণ্য ও সেবা ক্রয়ে মানুষের ব্যয় বাড়বে। ভোক্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কনসার্ট বাবদ অর্থ ব্যয়ে আগ্রহী হবেন।
মহামারির সময় থেকেই মানুষের ভ্রমণ কমেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় বিশ্বে মোট ভ্রমণকারীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ কম ছিল। এর মূল কারণ হলো উত্তর-পূর্ব এশিয়া, বিশেষত চীনের মূল ভূখণ্ড এবং জাপানের মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা এখনো মহামারি–পূর্ব অবস্থায় ফেরেনি।
মাস্টারকার্ডের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যান বলেন, ‘আমরা যদি ২০২৪ সালকে স্বাভাবিকতায় ফেরার বছর হিসেবে ধরি, তাহলে ২০২৫ হচ্ছে স্থিতিশীলতার বছর। আর্থিক নীতিতে শিথিলতা আছে, প্রতিকূলতা কমছে; এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে ভোক্তারা উপকৃত হবে।’
ডেভিড আরও বলেন, যদিও জাপানে সম্ভাব্য সুদের হার বৃদ্ধি অথবা মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে ভোক্তাদের আকাঙ্ক্ষা ইতিবাচকভাবে দেখার পাশাপাশি বাণিজ্যিক বাধাবিঘ্ন মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া।
প্রতিবেদনে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি প্রবাসী আয় গ্রহণকারী দেশের মধ্যে চারটি এই অঞ্চলের: ভারত, চীন, ফিলিপাইন ও পাকিস্তান। অভিবাসনের ফলে মানবসম্পদ কমে যাওয়া সত্ত্বেও প্রবাসী আয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর প্রাণ। বিশেষত, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ; শ্রীলঙ্কার জিডিপির ৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জিডিপির ৫ শতাংশ আসে প্রবাসী আয় থেকে।
এমইআইয়ের পূর্বাভাস, ২০২৫ সালে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতের। দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ-ভোক্তা ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির যেমন প্রসার হবে, তেমনি তা বিনিয়োগ সহায়ক হবে।
২০২৫ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার ওপর ভর করে চীন এগিয়ে যেতে পারে। ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও আবাসন মার্কেটের স্থিতিশীলতা এই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এদিকে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতেও ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ; শক্তিশালী শ্রমবাজার ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশটি এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
জাপানে মূল্যস্ফীতির অস্থিরতা চলমান। দেশটির মুদ্রা ইয়েনের দর কমেছে, পর্যটন ও উচ্চ মূল্যের বিলাসবহুল পণ্যে ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি হলেও তা ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মুদ্রা নীতি শিথিল করতে পারে।