রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য ও কানাডা—এসব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। অন্যদিকে এককভাবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমছে।
বর্তমানে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা—প্রচলিত বা পুরোনো এই চার বাজারই হলো বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮১ শতাংশের গন্তব্য। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৪ হাজার ২৬৩ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রচলিত এই চার বাজারেই রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের পোশাক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৭৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার এই বাজারে রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
আমাদের তৈরি পোশাকের মূল বাজারগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি খারাপ। সে কারণে কারখানাগুলো ২০-৩০ শতাংশ কম সক্ষমতায় চলছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য প্রচলিত বাজারে গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে রপ্তানি।ফজলে শামীম এহসান, সহসভাপতি, বিকেএমইএ
বর্তমানে দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশের গন্তব্য হচ্ছে ইইউ। গত ২০২১-২২ অর্থবছর ইইউতে রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত (জুলাই-মে) এই বাজারে ২ হাজার ১২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।
সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বাড়লেও ইইউর বড় বাজার জার্মানিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে। আলোচ্য ১১ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬০৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। তবে ইইউর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ বাজার অর্থাৎ স্পেন ও ফ্রান্সে রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত স্পেনে ৩২৩ ও ফ্রান্সে ২৬৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার। এই বাজারে চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছিল ৪০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
আরেক প্রচলিত বাজার কানাডায়ও রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ১৩৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৮ কোটি ডলার।
এদিকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারেও সামগ্রিকভাবে ভালো করছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে নতুন বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৭৬৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে জাপানে, যার মূল্যমান ১৪৬ কোটি ডলার। দেশটিতে গত বছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এক বছরে বাজারটিতে রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের ৭৫ কোটি ডলারের তুলনায় ৪১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।
নতুন বাজারের মধ্যে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে রাশিয়ায় ৪০ কোটি, ভারতে ৯৪ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ কোটি, চীনে ২৫ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ২৭ কোটি, মেক্সিকোতে ৩১ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২৮ কোটি, সৌদি আরবে ১৭ কোটি, নিউজিল্যান্ডে ১১ কোটি, চিলিতে ১৫ কোটি এবং ব্রাজিলে ১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের তুলনায় এবার রাশিয়া ও চিলিতে রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ২৯ ও ১২ শতাংশ। তবে বাকি দেশগুলোয় বেড়েছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকের মূল বাজারগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি খারাপ।
সে কারণে কারখানাগুলো ২০-৩০ শতাংশ কম সক্ষমতায় চলছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য প্রচলিত বাজারে গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে রপ্তানি।
ফজলে শামীম এহসান আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস ক্রয়াদেশ কমই থাকবে। তাতে রপ্তানিও কম হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আপাতত সেটিই আমাদের জন্য সুসংবাদ।’