গৌতম আদানির জন্য ভারতীয় নির্বাচনের ফলাফল তাঁর ওপর মার্কিন শর্টসেলার হিনডেনবার্গ গবেষণার আক্রমণের চেয়ে ভয়াবহ হয়েছে। কারণ, ভোটে প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ফলাফল ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই গৌতম আদানির সম্পদ কমেছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, বুথফেরত জরিপে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এরপর ভারতীয় শতকোটিপতি গৌতম আদানি এক দিনে যে সম্পদ হারিয়েছেন, তা যেকোনো এশীয় বিলিয়নিয়ারের জন্য একটি রেকর্ড।
আদানি গ্রুপের ১০টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। গতকাল সব কটি কোম্পানির শেয়ারের দামে পতন ঘটে। ফলে কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এটা ছিল এক দিনে এই গ্রুপের শেয়ারের দামে সর্বোচ্চ পতন। এক বছরের বেশি সময় আগে হিনডেনবার্গ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পরও আদানি গ্রুপের অবস্থা এতটা খারাপ হয়নি। ওই প্রতিবেদনে ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যমানের এই গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস সূচকের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে মূল্য ওঠানামার কারণে এখন পর্যন্ত যাঁরা এক দিনে সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন, সেই তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এসেছেন গৌতম আদানি। এক দিনে তাঁর চেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন কেবল ইলন মাস্ক ও মার্ক জাকারবার্গ। আদানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারে।
গত সোমবারেই আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি বেড়েছিল। সেদিন বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছিল যে নরেন্দ্র মোদি বিপুল ভোটে জিতবেন।
বিশ্বে খুব দ্রুত যাঁরা সম্পদশালী হয়েছেন, গৌতম আদানি তাঁদের একজন। গতকাল তাঁর সম্পদের পতন এটা প্রমাণ করছে যে বিনিয়োগকারীরা গৌতম আদানিকে দেখেন এমন এক ব্যক্তি হিসেবে, যাঁর ভাগ্য নির্ভর করে ভারতের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদির অবস্থান কী হচ্ছে, তার ওপর।
তবে আদানি গ্রুপ ও এর প্রতিষ্ঠাতা এটা বলে আসছেন যে সরকারের সঙ্গে তাদের অনুচিত কোনো সম্পর্ক নেই এবং যেকোনো সরকারের অধীনেই তারা তাদের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলো পরিচালনা করতে পারবেন।
তবে আদানি জানেন যে ভারতের নির্বাচনে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হবে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে যখন–তখন তাঁর নাম উচ্চারণ করেছে। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি নিজেও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে একবার তাঁর প্রসঙ্গ নির্বাচনী প্রচারণায় টেনে এনেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে বিরোধীরা এই কোটিপতির কাছে থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়েছে।
গৌতম আদানির অনেক উপদেষ্টা তাঁকে উপদেশ দিয়েছেন যে তিনি যেন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট না দেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একজন এ কথা জানিয়েছেন। নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত যাতে তিনি নিশ্চুপ থাকেন, সে ব্যাপারেও তাঁকে বলা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানি দুজনই পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট থেকে এসেছেন। দুজনের উত্থান অনেকটা একই সময়ে। মোদির অগ্রাধিকার হলো অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবেশসম্মত জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল সেবা। গৌতম আদানিও এসব খাতেই বিনিয়োগ করেছেন।
গতকাল আদানির যেসব শেয়ার মূল্য হারিয়েছে, তাদের মধ্যে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারের দাম কমেছে ২১ শতাংশ। আদানি এনার্জি সলিউশন লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ২০ শতাংশ। মূল কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটডের শেয়ারের পতন হয়েছে ২০ শতাংশ।
এক দিনে আদানি গ্রুপের শেয়ারের এটিই সবচেয়ে বড় পতন হলেও হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সার্বিকভাবে ভারতীয় এই গোষ্ঠী বেশি অর্থ হারিয়েছিল। সে সময় তাদের সম্পদ হারানোর পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে সোমবার শেয়ারের মূল্য বাড়ার পর আদানি সেই হারানো সম্পদের প্রায় পুরোটাই ফিরে পেয়েছিলেন।
গতকাল ভারতের এনএসই নিফটি ৫০ সূচক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমে য়ায়। গত চার বছরে এটিই ছিল নিফটির জন্য সবচেয়ে খারাপ দিন। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা যে মোদির নেতৃত্বাধীন জোট অল্প ব্যবধানে জয়ী হওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে নতুন সরকারের সক্ষমতা অনেক কম হবে।